মতি
– স্যার ,মনে হয় লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের মিস্টার বিশ্বাস এর সাথে একবার আলোচনা করে নিলে ভালো হয়।
কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষার পরেও কোনো সাড়া না পেয়ে চিফ মার্কেটিং ম্যানেজার মিঃ সোম বুঝলেন আজ বস অন্যমনস্ক।
বিষয় টা বোধহয় ভালো করে সবটা শোনেন নি। পেপার ওয়েট টা হাতে নাড়াচাড়া করে একটু শব্দ করে রেখে দিলেন টেবিলে।
বসের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলেন কাজ হয়েছে।
– হ্যাঁ স্যার, যা বলছিলাম।
সংক্ষেপে পুরো ব্যাপারটা আরেকবার বললেন মিঃ সোম।
-আপনি মিঃ বিশ্বাস কে একটু পরে পাঠান।
কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলেন। রিমাকে একবার ফোন করতে হবে। একটা ছোট্ট তুচ্ছ প্রাণী যে তার মতো মানুষের মনে এত জায়গা দখল করে নিয়ে ছিল তা আগে বুঝতে পারেন নি।
মাস ছয়েক হলো বাইপাসের ওপর একটা হাউসিং এ চলে এসেছেন মিঃ রায়। যাওয়া আসার সময় সিকিউরিটির ঘরের পশে একটা কুকুর -রাস্তারই হবে, বসে থাকতে দেখেছেন। নজর করার মতো কিছু চেহারা না।.
কিছুদিন পর থেকে রিমার গল্প শুরু হলো কুকুর টাকে নিয়ে। অফিস থেকে ফেরার পর ড্রয়িং রুমে চা খেতে খেতে যত গল্প শুরু হয় রিমার। বুঝলেন রিমার স্বভাবে কোনো পরিবর্তন হয় নি। কুকুর বেড়াল-পাখি -গাছপালা সব কিছুর প্রতি এমন অদ্ভুত মমতা কথা থেকে হয় কে জানে ! মিঃ রায়ের এসবের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই কোনো দিনই। তবু একসময় একটা ভালো জাতের কুকুর কিনে এনেছিলেন। সারাদিন রিমা একা একা থাকে। বছর তিনেক হলো মারা গেছে সে। দিন কয়েক মন খারাপ থাকলেও অফিসের ব্যস্ততায় কবেই ভুলে গেছেন তাঁকে। রিমা এখনো যে লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের জল ফেলে তা বেশ বুঝতে পারেন মিঃ রায়।
– জানো তো ওর নাম মতি, রিমা বললো। ও এই হাউসিং টা হবার সময় থেকেই এখানে আছে। অজিত – মানে ওই রোগা মতো সিকিউরিটি লোকটা ওকে ছোট্ট বেলায় রাস্তা থেকে নিয়ে এসে বড় করেছে। কিরকম চুপটি করে বসে থাকে দেখেছো ! আমি একদিন আদর করে বিস্কুট দিলাম, সেই থেকে আমাকে দেখলেই কেমন ছুট্টে এসে মাথা নিচু করে আদর খেতে চায়।
আর একদিন।
-জানো তো। মিঃ রায় বুঝলেন আবার মতির গল্প শুরু হল। -এই শুনছো ? কাগজ টা নামিয়ে বললেন – নিয়শ্চই তোমার মতির কথা -, বলো।
আরে শোনো না, আমি যখন রাস্তা পেরিয়ে ওই বড় স্টেশনারি দোকান টা বা পাশে কোনো দোকানে যাই মতি আমার সঙ্গে সঙ্গে যায় আবার আমাকে নিয়ে ফিরে আসে। সেদিন ওই যে কেকের দোকান টায় গেছি হটাৎ পিছন ফিরে দেখি মতি। অথচ গেট পার হওয়ার সময় আমি দেখিনি। কি অবাক করা কান্ড বলো তো।
একটু একটু করে মতির খাওয়া – শরীর খারাপে ওষুধ দেওয়া সব কিছুই দায়িত্ত যে রিমা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে তা বুঝতে পারছিলেন মি রায় । প্রায় রোজই মতি কে নিয়ে কোন না কোনো গল্প শুনতে হচ্ছিলো।
রিমার সঙ্গে একসাথে কোথাও যাওয়ার সময় মিঃ রায় লক্ষ্য করেছেন সত্যিই কুকুর টা কেমন ছুটে আসে। রিমার সঙ্গে এক অদ্ভুত মমতার সেতু কবে যে তৈরী হয়ে গেছে। কখনো বা রিমার কথায় মতি কে নিজের হাতে বিস্কুট দিতে হয়েছে। একটু একটু করে মিঃ রায়কেও ভালোবাসতে শুরু করেছিল কি! তা না হলে অফিস যাওয়া আসার সময় গাড়িটা দেখেই দাঁড়িয়ে উঠে লেজ নাড়াতো কেন !
– আজ না অবাক হয়ে গেছি আমি। খাবার টেবিলে বসে শুরু করলো রিমা। আজ তো সারাদিনই কি বৃষ্টি , তোমার কফি ত ফুরিয়ে গেছে। আমি তো ছাতার তলায়, আমাকে দেখেই ও দৌড়ে চলে এলো। এতো করে বললাম মতি ভিজিস না শরীর খারাপ হবে কিন্তু সেই আমার সঙ্গে গেলো আবার আমাকে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলো।
– সারাদিন ঝুমির মা বসে থাকে আর তুমি দোকান বাজার করে বেড়াচ্ছো ! এই রাস্তায় কিরকম গাড়ি চলে খেয়াল আছে ?
-তুমি কিছু ভেবো না। সারাদিন ঘরে ভালো লাগে বলো ?
গতকাল রাস্তা পার হতে গিয়ে মতির চিৎকারে সতর্ক হয়ে সরে যেতে পারলেও একটা খুব জোরে ছুটে চলা বাইকের ধাক্কা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেনি মতি।
রাতে বাড়ি ফিরে রিমার অঝোর কান্না দেখে নিজের চোখেও কি জল পড়ছিলো ! আজ বারবার কেন অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছেন ! ছ্ট্টো প্রাণীটার চেহারা টা কেন বারবার এতো কাজের মধ্যেও ভেসে উঠছে ! রিমা কি করছে এখন ? খেয়েছে কি ? মোবাইল টা হাতে নিলেন -৯৮৩৪………… .
-স্যার আপনি ডেকেছেন ?
– হাঁ আসুন মিঃ বিশ্বাস। এক মিনিট।
– হলো রিমা ! ওহ -একটু রিমাকে দ্যাও। কি বললে…………
View Comments
চিঠি
– স্যার ,মনে হয় লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের মিস্টার বিশ্বাস এর সাথে একবার আলোচনা করে...