Sankars Creation

সত্যি সত্যিই বর্ষা এল তবে। অনেকক্ষণ ধরেই মেঘের গুরু গুরু আওয়াজ শুনছিল নীলদীপ । আষাঢ় মাস এল বলে । এবছর তেমন বৃষ্টি হয়নি। প্রায় পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস ছিল খটখটে, নির্জলা। কালবৈশাখী মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কোলকাতার থেকে । সবুজ হারিয়ে শহরটা ক্রমশ কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে । অবশ্য সারা পৃথিবীতেই জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে চলেছে । এল নিনোর প্রভাব তো আছেই, তাছাড়া বৃক্ষ নিধন, উষ্ণায়ন কত কি কারণ । দুর্বিষহ গরমের সাথে যুদ্ধ করতে করতে ওষ্ঠাগত প্রাণ । কোলকাতার রাস্তায় প্রায় প্রতিদিনই অসুস্থ হচ্ছে কেউ না কেউ । পশ্চিমের জেলাগুলোতে প্রায়ই মৃত্যু হচ্ছে মানুষের । ঝড়বৃষ্টিও হচ্ছে জেলায় জেলায় । সেখানে মৃত্যু হচ্ছে ব্জ্রাঘাতে । প্রাকৃতিক কারণে মানুষের মৃত্যু হলে নীলদীপ দুঃখ পায়না। দুঃখ পায় মানুষের কারণে মানুষের মৃত্যু হলে ।

সকালের আকাশটা আজ পরিষ্কারই ছিল । শুধু আকাশের এককোণে একখণ্ড মেঘ একাকী কার প্রতীক্ষায় যেন দাঁড়িয়ে ছিল আনমনা ভাবে । সুতপাও এভাবে দাঁড়িয়ে থাকত কলেজের গেটের বাইরে এককোণে । আনমনা ভাবে । বিভিন্নরকম আওয়াজ দিয়ে চলে যেত অনেকেই । সুতপা সর্বংসহা, সব সহ্য করে নিত মুখ বুজে । শুক্লা কতবার বলেছে, “তুই কিছু বলিস না কেন? পাল্টা দিবি তাহলে দেখবি সব লেজ গুটিয়ে পালাছে ।”
সুতপা একবার শুক্লার দিকে একবার নীলদীপের দিকে তাকাত । ওর চোখদুটো দেখে মনে হত রাগ, ক্ষোভ- দুঃখ কিছুই নেই । শুধু আছে ক্ষমা । সে হেসে বলত, “বলতে বলতে ওরা একসময় ক্লান্ত হয়ে বলা ছেড়ে দেবে ।”
একদিন সুতপাই কলেজ ছেড়ে দিল । সুতপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল আচমকাই । সুতপারা তিন বোন । সুতপা বড় । সুতপার বাবা সুপাত্র হাতে পেয়ে হাতছাড়া করতে চাইলেন না। সুতপার উপায় ছিল না। নীলদীপের সাহস ছিল না । অপরিণত দুটো ছেলেমেয়ের প্রেম পরিণতি পেল না অন্যান্য অনেক প্রেমের মতো । সুতপার মনে কি হল জানে না নীলদীপ । ওর বুকটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল । বন্ধুরা সহানুভূতি দেখাল । একজন বলল, “আরে একজন গেছে তো কি হয়েছে ? ফির ঢুন্ড লে এক ঔর ।” আর একজন বলল, “মেয়ে কি কম পড়িয়াছে ?”
নীলদীপ একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছিল জীবন থেকে । হারাল না শুক্লার জন্যে । শুক্লা ওর ভালোবাসা দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিল নীলদীপকে । শুক্লার নাছোড় মনোভাবের জন্যেই নীলদীপ আবার ফিরে এসেছিল স্বাভাবিক জীবনে ।
আজ আবার রক্তক্ষরণ হচ্ছে বুকের ভেতরে । বৃষ্টি এখনও নামেনি তাতেই । সুতপা বৃষ্টি ভালোবাসত খুব । বলত, “বৃষ্টি হল ভগবানের আশীর্বাদ । কোনদিন গ্রাম তো দেখলেনা, আমাদের গ্রামে গেলে বুঝতে পারতে কথাটা কেন বলি ।”
স্নানে চলে গেল নীলদীপ । মন খারাপ হলে বরাবরই এটা করে সে । মাথায় প্রচুর জল ঢালে তখন । শরীর ও মাথা ঠাণ্ডা হলে বুকটাও জুড়ায় কিছুটা । সে জানে মানুষের সুখ ক্ষণস্থায়ী কিন্তু সুখের স্মৃতি স্থায়ী দাগ রেখে যায় মনের ঘরে, হাজার দুঃখের ভিড়েও হারিয়ে যায় না। কখনো ইচ্ছেয়, কখনো অনিচ্ছায় এক টুকরো সুখস্মৃতি আনন্দ ফিরিয়ে দেয় । সুখস্মৃতি সবসময় আনন্দের হয় না, কখনো কখনো দুঃখও দেয় মনে । তখন হৃদ্স্পন্দন বাড়ে । বুকের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয় ।
স্নান করে এসে দেখল শান্তিনিকেতন থেকে আনা একটুকরো রবীন্দ্রনাথ হাওয়ায় দুলছেন । রনিই পছন্দ করে কিনেছিল নীলরঙের কাপড়ের উপর সাদা রঙে আঁকা পক্ককেশ, শ্মশ্রুমণ্ডিত কবিগুরুর প্রতিকৃতি । নিচে হলুদ রঙে লেখা কবির বিখ্যাত সে কবিতার লাইন।
“ বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু ।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপর
একটি শিশির বিন্দু ।”
কবিগুরুর উজ্জ্বল চোখদুটোতে সম্মোহনী শক্তি আছে । নীলদীপ বহু বার দেখেছে সেটা । তাকিয়ে রইল ছবিটার দিকে । রনি ওর কাকাই-এর জন্যেও একটা রবীন্দ্রনাথ কিনেছিল । কাকাই-এরটা খয়েরি রঙের । যদিও কাকাই-এর ড্রয়িংরুমে মস্তবড় একটা রবীন্দ্রনাথ আছে । পূর্ণাবয়াব রবীন্দ্রনাথের জলরঙে আঁকা ছবি । কাকাই-এর ফ্ল্যাটে ওটাই মানায় ।

সারা আকাশ জলভরা মেঘে ঢেকে গেছে । গুরুগম্ভীর স্বরে মেঘের ডাকাডাকি শুনে মনে হচ্ছে জল ঢালার জন্যেই প্রস্তুতি চলছে । উত্তর- পূর্ব আকাশে একটা তীব্র আলোর ঝলক দেখতে পেল নীলদীপ । তারপরই সেই কানফাটানো আওয়াজ । বজ্রনিনাদে মেঘবার্তা। সঙ্গে সঙ্গেই ঝোড়ো হাওয়া উঠল একটা । জানলার পাল্লা আছড়ে পড়ল সশব্দে । কাছেই কোথাও বাজ পড়ল বোধহয় ।
কয়েকদিন ধরে মাসি কাজে আসছে না । অনেকগুলো জামা-কাপড় জমে গিয়েছিল । ওগুলো কাচতেই এত দেরি হল । আকাশের যা অবস্থা একটাও শুকাবে না আজ । তবু হোক বৃষ্টি । মানুষ দুঃসহ গরমের হাত থেকে মুক্তি পাক একটু । গত বছর  মাসির একটা মেয়ে মরে গেল হঠাৎ । এখন একটাই মেয়ে ঘরে । মেয়েটাকে কয়েকবার সঙ্গে এনেছে মাসি । একটু যেন হাবাগোবা। মেয়ে হাবাগোবা হলে কি – শরীরে জোয়ার আসছে । মাসির ওকে নিয়েই ভয় এখন । ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায় । কিছুদিন আগে এক মেয়ে দিদির বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আর ফেরেনি । বড় ভগ্নীপতির সঙ্গেই থাকে এখন । বড় মেয়ে রাগ করে প্রথমে বাড়ি ফিরে এল । ক’দিন পরে আবার ফিরে গিয়েছিল ছেলেমেয়ের জন্যে। সতীনের জ্বালা দ্বিগুণ হয় যদি সতীন হয় বোন । বড় মেয়ে সতীনকাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে ঘর ছাড়ল । মায়ের হাত ধরে কোলকাতায় চলে এল সে । কয়েকটা কাজ নিল । রান্নার কাজ নিল একটা । দু’বেলা খাওয়ার জোটে সেখানে । তবে কোলকাতায় থাকতে হয় । ঘর ভাড়া নিয়েছে কলোনিতে । ছেলেমেয়ের জন্যে টাকাও পাঠায় মাঝে মাঝে ।
শুধু জামাই নয় গাঁয়ের ছেলেগুলোকেউ ভয় পায় মাসি । ওদের গ্রামটা নাকি এখন খুব খারাপ হয়ে গেছে । “শেয়াল কুকুরের মতো ঘুর ঘুর করছে আর দুষ্কর্ম করে বেড়াচ্ছে ।” মাসি বক বক করে প্রায়ই । জমিজমা নিয়ে শরিকি বিবাদ আছে । বাড়ির সীমানা নিয়ে, পুকুরের মাছ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে অনেকবার । গ্রামে বড্ড নোংরা রাজনীতি চলে । প্রাণ ও জমিজমা বাঁচাতে দলবদল, মারামারি। দেশের রাজনীতির পরিবর্তনে গ্রামের রাজনীতির রঙ বদলালেও গ্রাম্য সমাজের পরিবর্তন হয় না । মাসির কাছে শুনে শুনে এসব ধারনা হয়েছে নীলদীপের ।
সুতপা আবার ফিরে এল মাথায় । সুতপা বলেছিল একদিন ওকে গ্রামে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু গ্রামের ব্যাপার একটু অন্যরকম । ঢিঢি পড়ে যাবে । তাছাড়া বাবার ভয় । যাওয়া হয়নি গ্রামে। সুতপাই চলে গেল গ্রাম ছেড়ে । দেশ ছেড়ে । সুতপাও গ্রামের গল্প শোনাত। সে বলত, “নাগরিক জীবনে অনেক রঙ । গ্রামের জীবনে রঙ আসে গরম ভাতের গন্ধের সঙ্গে মাটির গন্ধে, পানা পুকুরের গন্ধের সঙ্গে সোঁদা মাটির গন্ধে । রঙিন কোন স্বপ্ন দেখে নয়- দরিদ্র গ্রাম্য মানুষগুলোর সাদা চোখে বাঁচার স্বপ্ন টল্টল্ করে কালোদিঘির জলের মতো ।” সুতপা কি এখনও ওর গ্রামকে মিস করে ? খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে । সে একবার জোর দিয়ে বলতে পারল না ! সুতপা, আমি মরে যাব তোমাকে ছাড়া ।
সুতপাও তো ওর বাবাকে বলতে পারত । বলেনি। হয়ত সে মনে মনে চেয়েছিল প্রতিষ্ঠিত স্বামী, ঐশ্বর্য । সে সুন্দরী । তাকে দখলে নেওয়ার জন্যে পুরুষেরা ঝাঁপাবেই । জানত সে । কলেজের ক’টা দিনের জন্যে তার হয়ত একটা বডিগার্ডের প্রয়োজন ছিল তাই নীলদীপের কাছে ধরা দিয়েছিল । ছিঃ ! সুতপার সম্বন্ধে এসব ভাবতে পারল সে ! ধিক্কার দিল নিজেকেই। আসলে সে সুতপার যোগ্যই ছিল না । তাই সুতপাকে ধরে রাখতে পারেনি ।

মাছ ভাজতে গিয়ে গরম তেল ছিটে এসে লাগল মুখে। তাড়াতাড়ি জল দিয়ে ধুয়ে নিল নীলদীপ, না হলে ফোস্কা পড়ে যাবে জানে সে। জ্বালা করছে খুব। একটু পেস্ট লাগাল। বার্নল ঘরে নেই বোধহয়। থাকলেও খুঁজে পাবে না সে । এমনিতেই চা পাতা, মশলাপাতি, নুন খুঁজে পায়না আজকাল ।
ভাত চাপিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল নীলদীপ । নারকেল গাছের মাথায় একটা কাক বসে আছে । ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখছে । হয়ত কাক মা এখন বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে ওর বাসায় কিংবা ডিমে তা দিচ্ছে । আর কাক বাবা চারদিকে নজর রাখছে। কাকটার মনে নিশ্চয়ই খুব গর্ব সে এক দায়িত্ববান বাবার কাজ করছে বলে । মা কাক হয়ত জানেই না সে যে ডিমে তা দিচ্ছে বা সে যে বাচ্চাটার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে সেটা ওর বাচ্চা নয় । বাবা কাকটাও জানে না সে কার বাচ্চার সুরক্ষায় নিয়োজিত। যখন কাক মা জানতে পারবে তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে । কোকিলগুলো খুব বদমাশ হয়, বসন্তের লোভ দেখায় শুধু । ওদিকে নিজের ডিম ফোটানোর ক্ষমতা নেই, কাককে ঠকায় ।
রনি’র পরীক্ষা চলছে তাই এ সপ্তাহে বাড়ি আসেনি । শুক্লা সুযোগ পেয়ে দিদির বাড়ি গেছে । শুক্লা বাড়িতে না থাকলে একদিকে ভালই থাকে নীলদীপ। ঝগড়াঝাঁটি নেই । অখণ্ড শান্তিবিরাজমান । রান্নাবান্না করতে ভালই লাগে ওর । শুক্লা প্রায়ই বলে, “তুমি সুতপা ছাড়া কাউকে ভালোবাসো না । আমাকে তো নয়ই, রনিকেও ভালোবাসো না ।” কথাগুলো মোটেই ঠিক না । রনি ওর জীবনের একমাত্র আশা । অনেক স্বপ্ন দেখে রনিকে নিয়ে । শুক্লাকে কোনদিন প্রেমিকা না ভাবলেও বন্ধু ভেবেছে, ভালোও বেসেছে । তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তো সে নীলদীপের সন্তানের মা । কেদারনাথ ব্যানারজী’র পুত্রবধূ । নীলদীপের স্ত্রী । তবু শুক্লার খোঁটা, “আমি তো সুন্দরী না তাই ভালোবাসো না । সবসময় সুতপার কথা ভাব। সুতপার নাম জপ কর ।” এভাবেই শুক্লা বার বার সুতপাকে এনে ফেলে ওদের মধ্যে ।
সুতপা মাটির সুন্দরী । প্রতিমার মতো মুখ, টানাটানা চোখ, সঙ্গে গ্রাম্য সতেজতায় ভরা শরীর । কলেজের ছেলেরা খুব মজা করত ওকে নিয়ে । বলত, “গেঁয়ো সুন্দরী ।” মেয়েদের মধ্যেও ওকে নিয়ে খুব ফিস্‌ফিসানি চলত । কেউ কেউ গাঁইয়া বলে পরিহাস করত। সুতপা রাগ করত না ওদের কথায় । হেসে বলত, “আমি তো গাঁইয়াই ।”
শুক্লার সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়েছিল সুতপার । শুক্লার মধ্যে একটা কমান্ডিং ভাব ছিল বুড়ি ঠাকুমা, দিদিমাদের মতো । ছেলেমেয়েরা ওকে ঠানদি বলে ডাকত । শুক্লা সেটা যেমন এনজয় করত তেমনি সবাইকে ধমকেও রাখত । ওদের তিনজনের টীমটা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। ঠিক সেসময়ই ছন্দপতন । সুতপা সরে গেল শুধু দলটা থেকে নয়- কলেজ ছেড়ে, নীলদীপের জীবন থেকে। এমন কি নিজের দেশটা ছেড়েও চলে যেতে হল ওকে । ওর বিয়েতে ঠানদির দলের সবাই গেলেও নীলদীপ গেল না । সেদিন থেকেই নীলদীপ যেন একা হয়ে গেল । আজ যখন চুলে পাক ধরেছে, চোখে চালসে এসেছে তখন বুঝতে পেরেছে সব মানুষই একা ।

ভাতের গন্ধটা উঠছে এখন । একটা ভাত টিপে দেখল প্রায় সেদ্ধ হয়ে এসেছে । মাছের ঝোলভাত । একা মানুষের এই যথেষ্ট। ভাত নামায় নীলদীপ । বাসন মাজার কথা মনে হতেই আবার মাসির কথা মনে পড়ল। আজ অসুবিধা হবে না । অসুবিধা হবে কাল । কাল অফিস আছে । আজ রাতেই কালকের সকালের রান্নাটা করে রাখতে হবে । সকালে শুধু ভাতটা করে নেবে ।পরশু রাতেই শুক্লা বলছিল, “মাসিদের কোন বিপদ হয়নি তো ? না বলে মাসি তো এতদিন কামাই করে না । মাসিদের গ্রামে যে সব গোলমাল হয় শুনেছি । কতবার বলেছি, মাসি, বড় মেয়ের সঙ্গে এসে থাক না । তা শুনবে না ।”
– আর মাসির ছোট মেয়ে ? মাসির বর ?
একটুও না ভেবে শুক্লা উত্তর দিয়েছিল , “ছোট মেয়েকে নিয়ে এসে কোন কাজে ঢুকিয়ে দিলেই তো হয় । মাসির বর ঘর সামলাবে। মাসির রোজগারে খাচ্ছে যখন তখন ওটুকু কষ্ট তো করতেই হবে । মাসি মাঝে মাঝে বাড়ি যাবে ।” কি সহজ সমাধান ! শুক্লার সঙ্গে কথা বাড়ালেই কথা বাড়ে নীলদীপ জানে সেটা । তবু বলেছিল, “তুমি যত সহজে বলে দিলে ব্যাপারটা অত সহজ না। যাকগে ওসব কথা । মাসির বাড়ি কোন গ্রামে যেন ?” শুক্লা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলেছিল, “কি একটা দিঘি যেন” – মনে করার চেষ্টা করছিল সে । খস্‌ খস্‌ করে শব্দ হচ্ছিল শুক্লার বড় বড় নখের সঙ্গে শুকনো মাথার ঘর্ষণে । গ্রামের নামটা বের হয়নি । “মাসির বড় মেয়েটা যে কোথায় থাকে সেটাও তো জানি না। কি যেন নাম মেয়েটার ?” অনেক চেষ্টার পর মাসির বড় মেয়ের নাম মনে করতে পেরেছিল সে। “হ্যাঁ, মনে পড়েছে নামটা। রঞ্জনা। কি যে নাম ! ওদের আবার ওসব নাম রাখে না কি ! ওদের তো লক্ষ্মী, সরস্বতী এসব নাম হয় । তুমি রঞ্জনার একটু খোঁজ করে দেখ না।”

ভাত নামিয়ে রেখে শোবার ঘরে এল নীলদীপ । রবীন্দ্রনাথ আবার দুলে উঠলেন । ঠিক তখনই ধুলোর গন্ধটা নাকে এসে লাগল। এই গন্ধটা পেলেই ওর খুব কষ্ট হয় । বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে এই গন্ধটা অনেকবার পেয়েছে ও । সুতপার এই গন্ধটা খুব ভাল লাগত । সে বলত, “এই গন্ধটাই বইমেলার প্রাণ । ধুলিধূসরিত পায়ে চলতে চলতে ধুলোর গন্ধ নাক দিয়ে টেনে নিতে নিতে বই দেখা ও বই কেনা এতো বছরে একবারই আসে ।”নীলদীপের জীবন থেকে বইমেলাটাই হারিয়ে গেছিল । সুতপা ওর জীবন থেকে চলে যাবার পর ও বইমেলায় যায়নি অনেকদিন। রনিকে নিয়ে যখন আবার যেতে শুরু করে তখন তো বইমেলা সায়েন্সসিটির উল্টোদিকে চলে এসেছে । এখানে অত ধুলোও নেই, ধুলোর গন্ধও নেই ।সেবার শান্তিনিকেতনে গিয়ে ধুলোর গন্ধটা পেয়েছিল । ধুলোর ঝড় উঠেছিল খোয়াইতে । লাল ধুলোর ঝড় । নাকে ঢুকে গিয়েছিল তীব্রভাবে । কষ্টও পেয়েছিল খুব । মাথা থেকে পা পর্যন্ত লাল ধুলোর আস্তরণ ।
জানলাগুলো একে একে বন্ধ করে দিল নীলদীপ । ঘরে ধুলো ঢুকছে । শুক্লার নাইটিটা কখন নিচে পড়ে গেছে। আলমারিতে তুলে রাখতে গিয়ে দেখল ওর গয়নার বাক্সটা খোলা । শুক্লার কোন জিনিসপত্রে নীলদীপ হাত দেয় না । এমনকি আলমারিতেও না । আজ দিতে বাধ্য হল । গয়নার বাক্সটা বন্ধ করতে গিয়ে পুরানো কাগজটা দেখল সে । হলদে হয়ে গেছে । কৌতূহলী হয়ে হাতে নিল ভাঁজ করা কাগজটা । নরম হয়ে গেছে খুব । সাবধানে খুলতে হবে না হলে ছিঁড়ে যাবে । একবার ভাবল, ও ঠিক করছে না । নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে । ভাবতে ভাবতেই খুলে ফেলল কাগজটা । অস্পষ্ট হয়ে এসেছে নীল কালির লেখাগুলো । তবু পড়া যাচ্ছে । হাতের লেখাটাও খুব চেনা ওর । সুতপার চিঠি । অনেকদিন আগে লেখা ।
বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে। সুতপা যা লিখেছে তা কি ঠিক ? যদি পুরোটা সত্যি হয়ে থাকে তবে শুক্লা কেন জানায়নি এতদিন ? সুতপাই বা কেন একবারের জন্যেও ওকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি ! ওর জীবন নিয়ে এতবড় সিদ্ধান্ত ওরাই নিল ?

চিঠিটা আগের জায়গায় রেখে গয়নার বাক্সটা বন্ধ করল সে । আলমারিও বন্ধ করল । তারপর উদাস নয়নে তাকিয়ে রইল রবীন্দ্রনাথের মুখের দিকে । সুতপার মতো মেয়েদের জন্যে কবিগুরু কিছু লিখে যাননি ? এই মুহূর্তে মনে পড়ল না নীলদীপের। সুতপার লেখা কথাগুলোই মনে ভাসছে এখন । আবার শুক্লার আলমারি খুলল সে । গয়নার বাক্স খুলে চিঠিটা বের করল । সেই লেখাগুলো আবার পড়ল যেখানে সুতপা লিখেছে, “বাবার কথার অবাধ্য হতে পারতাম, পারলাম না তোর কথা ভেবে । নীলের বাবা যে তাঁর বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে নীলের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে সেটা আগে জানলে নীলকে কষ্ট দিতাম না । তোকেও কষ্ট দিতাম না । আমি ভেবেছিলাম তোরা শুধু বন্ধুই । তুই যে আমার নীলকে অত ভালোবাসিস আগে জানলে আমি না হয় প্রথম থেকেই নীলদীপের শুধু বন্ধু হয়েই থাকতাম । নীলদীপের বাবা আর তোর বাবার বন্ধুত্ব অটুট থাকুক । ওনাদের জন্যে রইল আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম । তোর জন্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা । আমার নীলের জন্যে তো কিছু দিয়ে যেতে পারলাম না । তোর হাতে ওকে সঁপে দিয়ে গেলাম । ওকে খুব ভালো রাখিস, অনেক অনেক ভালোবাসিস। কোনদিন কষ্ট দিবি না ওকে । মনে কিছু করিস না, নীলের একটা ছবি রাখলাম বুকের মধ্যে। ওটা নিয়েই কেটে যাবে আমার বাকি জীবনটা । শরীর আর মন আলাদা হয়ে গেল এই যা ! তুই ওকে দুটো দিয়েই ভালো থাকিস।” নীলদীপের চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল চিঠির উপর । আশ্চর্য হয়ে দেখল জলের ফোঁটা যেখানে পড়েছে তার পাশে আগে থেকেই দু’ফোঁটা জল পড়েছিল । চিঠিটা লেখার সময় সুতপাও বোধহয় কেঁদেছিল। হয়ত একবারে চিঠিটা লিখতেই পারেনি সে । নীলদীপের চোখ ভেসে যাচ্ছিল জলে । চোখের জলে চিঠির লেখাগুলো মুছে যাচ্ছে দেখতেই পেল না নীলদীপ ।

ফোনটা বাজছে । চোখের জলে ভেজা চিঠিটা যথাস্থানে রেখে এসে ফোন ধরল নীলদীপ । “হ্যালো ।”
– হ্যালো ! দাদাভাই বলছ ! কি হয়েছে তোমার ? গলাটা অত ভারি শোনাচ্ছে কেন ? উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে ওপ্রান্তে থাকা গীতশ্রী।
নীলদীপ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে আশ্বস্ত করে গীতশ্রীকে, “নারে, কিছু হয়নি ।”
– না, দাদাভাই। কিছু একটা হয়েছে নিশ্চয়ই । দিদিভাই কোথায় ?
– শুক্লা একটু ওর দিদির বাড়ি গেছে ।
– আর তুমি হাত পুড়িয়ে রাঁধছ আবার ! তোমাকে না কতদিন বলেছি দিদিভাই না থাকলে এখানে চলে আসবে । আর দিদিভাইও তেমনি আমাকে বলেও যায় না । তা কি রান্না করেছ শুনি । সেদ্ধ-ভাত ?
– নারে না । দাদাভাইকে এত ফালতু ভাবিস নাকি ! মাছ-ভাত রেঁধেছি ।
-সে যাই রাঁধো । এখন চলে এস দেখি ।
-নারে, অনেক জামাকাপড় কেচেছি । আকাশটাও ভাল না ।
-এই তোমার দোষ । কথা শুনবে না। ঠিক আছে রাতে চলে এসো কিন্তু ।
-তার চেয়ে তোরা চলে আয় না বাড়িতে । জানিস, বড় একা একা লাগে আজকাল । খুব কষ্ট হয় । আমার কাছের মানুষগুলো সব দূরে চলে গেছে মনে হয় । বলতে গিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না নীলদীপ । গীতশ্রী বোঝে কিছু একটা হয়েছে । সে বলে, “ঠিক আছে তোমার ভাই-এর সঙ্গে কথা বলব আমি । এখন খেয়ে নাও । অনেক বেলা হল । বিকেলে চলে আসবে কিন্তু । না এলে তোমার আদরের মেয়েকে পাঠিয়ে দেব ধরে আনতে ।” সে ফোন নামিয়ে রাখে ।আকাশের মেয়ে শ্রেয়শ্রী । সে এলে ধরে নিয়ে যাবেই নীলদীপকে । নীলদীপ খুব ভালোবাসে মেয়েটাকে । সেও খুব ভালোবাসে জেমানকে । ওই নামেই সে ডাকে জেঠাকে । গীতশ্রীই বোধহয় ওই ডাকটা শিখিয়েছে ।

গীতশ্রী তো শুধু ভাইবউ না, ছোট বোনও । সে একদিন আবদার করে বলেছিল , “দাদাভাই আমার কোন দাদা বা ভাই নেই। তুমিই আমার দাদা, আমার ভাই । তোমাকে ভাইফোঁটা দিতে চাই ।” নীলদীপ না করেনি । সেই থেকে ভাইফোঁটা দেয় গীতশ্রী। আকাশদীপ বলেছিল, “আর আমাকে কে ফোঁটা দেবে ।” গীতশ্রী সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়ে দিয়েছে , “তোমার পক্ষে বোন বা দিদি জোটানো খুব কঠিন । চেষ্টা করে দেখতে পার, পাবে না মনে হয় ।” আকাশ গীতশ্রীর কানে কানে কিছু বলতেই চোখ পাকিয়েছিল গীতশ্রী ।
ভাই অনেক বেশি সাহসী, অনেকবেশি সমঝদার । ব্যক্তিত্ববান পুরুষ সে । বাবার মুখের উপর বলতে পেরেছিল, “আমি গীতশ্রীকে ভালোবাসি । ওকেই বিয়ে করব ।” বাবা এই অনুলোম বিয়ে মেনে নিতে পারেনি । হুঙ্কার দিয়ে উঠেছিলেন, “এ বাড়িতে থেকে ওসব চলবে না । বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে যা খুশি কর।” ভাই বাড়ি থেকে সত্যি সত্যিই বেরিয়ে গিয়েছিল । গীতশ্রীকে বিয়ে করে সে ভালই আছে । বাবার মৃত্যুর পর নীলদীপ ওকে বাড়ি ফিরে আসতে বলেছিল । ভাই আসেনি । বরাবরই ও খুব অভিমানী কিনা ।

কান্নার ঝড়টা থেমে গেছে গীতশ্রী’র ফোনটা আসায় । ওকে কেউ কোনদিন কাঁদতে দেখেনি । শুক্লাতো নয়ই । শুক্লা যদি ওকে ওভাবে কাঁদতে দেখত তবে কি বলত কে জানে ! নীলদীপ নিজেই অবাক এখন সে ওভাবে কাঁদতে পারে ভেবে । পুরুষ বলে কি পাথরের মতো শক্ত হতে হবে ? পুরুষের কি মন নেই কাঁদার ? চোখের জলের অধিকার কি শুধু মেয়েদের ? মনের মধ্যে এতগুলো প্রশ্ন উঠে আসার পর সে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হল, পুরুষমানুষ ইচ্ছে করলেই কাঁদতে পারে না । কিন্তু পুরুষেরও কান্না পায় । সে কান্না আসে বুকের ভেতর থেকে ।

মনের ঝড়টা থেমে গেলে আর একটা দুর্ভাবনা চেপে ধরল এসে মাসির জন্যে । একটা বিচ্ছিরি চিন্তা ঘুরছে মাথায় । ভয়ংকর একটা ছবি দেখতে পেল সে । পোড়া বাড়িটা থেকে ধোঁয়া উঠছে । মাসি ন্যালাখ্যাপা মেয়েটার দেহটা কোলে দাওয়ায় বসে আছে ড্যাবড্যাবে চোখে । কেন যে এমন চিন্তা মাথায় এল কে জানে ! খবরের কাগজ আর মিডিয়াগুলোই এসব ভাবনা মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে বোধহয়। অবশ্য এসব ঘটছেও তো আজকাল । মিডিয়া এখন অনেক স্ট্রং – দেশের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা তারা তুলে ধরে মানুষের কাছে । দ্রুত পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে । নীলদীপ ভেবে পায় না তা সত্বেও এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে দেশ জুড়ে । দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে নীলদীপ । চেষ্টা করে অন্য কিছু ভাবতে । কল্পনায় মাসির বাড়ির ছবিটা তুলে আনে । মাসির কাছে অনেকবার মাসির বাড়ির গল্প শুনেছে সে । পটলের মাচা, ঢ্যাঁড়শের খেত, ঘরের চালে কুমড়ো, লাউ মাচায় নধর লাউ । উঠানের ঠিক মাঝখানে তুলসি মঞ্চ । অনেকদিন আগে স্বপ্নে দেখা বৃষ্টিভেজা মেঠোপথে হাঁটে সে । কতরকম পাখির ডাক শুনতে পায়। মাঠে ঘাস খেতে খেতে লালিগাইটা মুখ তুলে দেখে আগন্তুককে । একটা ফিঙে খুব বিরক্ত করছে ডোবার জলে ভেসে থাকা মোষটাকে। দূর থেকে মাসি দেখতে পায় নীলদীপকে । ছুটে আসে সে । বলে , “বাবা, আপনি ? আসুন,, আসুন ।” মাসি নীলদীপকে কখনো কখনো আপনি সম্বোধন করে । মাসির বিস্ফারিত চোখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে সে । “কেমন চমকে দিলাম তো ?”
ছোটবেলায় বাড়ির উঠানে দেখা ন্যাড়া মাথার শালিকের মতো ন্যাড়ামাথা মাসির বর রোগা শরীর নিয়ে নীলদীপের জন্যে ডাব পাড়তে ছোটে । পুকুরঘাটে কাত হয়ে থাকা নারকেল গাছটায় অনেক কচি কচি ডাব ঝুলছে । গ্রামের এই ছবিই তো সে দেখতে চায় । দেখতে চেয়েছিলও । সুতপাই দেখিয়েছিল সে ছবিটা ।
রবীন্দ্রনাথ আবার দুলে উঠলেন । একমুখ প্রশান্তি নিয়ে তিনি যেন কিছু বলতে চাইছেন । রবীন্দ্রনাথ এখনও মানুষের জীবনে কত প্রাসঙ্গিক । একমাথা সাদা চুল, উন্নত নাক, চওড়া কপাল, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ আর লম্বা সাদা দাড়িতে অসাধারন লাগে তাঁকে । মহাঋষি তিনি । তাঁর জীবনেও অনেক আঘাত এসেছে, দুঃখ এসেছে । দুঃখকে জয় করেছেন কবিতা আর গানের মধ্য দিয়ে । তিনি মানুষকে যা দিয়ে গেছেন তা অফুরন্ত । নীলদীপের মনে হল রবীন্দ্রানাথ ওকে এখন ভরসা প্রদান করছেন ।
একটু আগে শুক্লার উপর যে রাগটা হয়েছিল সেটা এখন আর নেই । শুক্লা সুতপার চিঠিটা নষ্ট করে ফেললে ওর হয়ত জানাই হত না সুতপার এই বলিদানের কথা । হ্যাঁ, বলিদানই বটে ! শুক্লা চিঠিটা নষ্ট না করে অত যত্ন করে দিয়েছে কেন ভাবছিল সে। শুক্লা কি অনুতপ্ত ? মনে হয় না । তবু শুক্লার জন্যে করুণা অনুভব করে সে । শুক্লা ওর স্ত্রী হতে পেরেছিল সুতপার দয়ায় কিন্তু নীলদীপের বন্ধুত্ব হারিয়ে ।
সুতপা শুধু অনেক দূরেই চলে গেছে তা নয় সে অনেক উপরেও উঠে গেছে । ওর নাগাল পাওয়া সম্ভব না । সুতপা সাধারণ মানবী নয় । মহিয়সী নারী । নীলদীপ জন্মান্তর বিশ্বাস করে না । বিশ্বাস করলেও হয়ত পরের জন্মে সুতপাকে প্রেমিকা হিসেবে চাইত না ।
বাবার উপরেও এখন আর রাগ নেই নীলদীপের । বাবা-মা তো সবসময় সন্তানের ভালই চান । হয়ত বাবা ওটাই ঠিক ভেবেছিলেন। ভুল তো মানুষেরই হয় ।

ভাত বাড়তে বাড়তে অনেকদিন পর সে গরম ভাতের গন্ধ পেল সে । ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত । মনটা খুশিতে ভরে যাচ্ছে ওর । যেন কতদিন গরম ভাত খায়নি । মাছের ঝোল দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে মায়ের কথা মনে পড়ল । মা সেই কবেই চলে গেছেন ওদের তিনজনকে ফাঁকি দিয়ে । ভাইটা তো তখন কত ছোট। মায়ের স্নেহ- মমতা তেমন ভাবে পায়নি বলেই হয়ত ও এত অভিমানী । এবার যে করেই হোক ভাইকে ও বাড়িতে নিয়ে আসবে । বড়ভায়ের অনুরোধ সে রাখবে না ? আবার খুব কান্না পেল ওর । খুব একা একা লাগছে এখন । ঘরটা ওকে গিলতে আসছে যেন । মা চলে গেছেন, বাবা চলে গেছেন । সুতপাও চলে গেছে ওকে ভিখারি বানিয়ে । আর কত যন্ত্রণা সহ্য করবে সে ? বুকটা যে চুরমার হয়ে যাচ্ছে ওর ।
ভাত তখনও মুখেও দেয়নি, আকাশটা ফাটল । বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামল বাইরে । একটা থালা দিয়ে ভাতটা ঢেকে রেখে হাত ধুয়ে ছুটল জামাকাপড় তুলতে । ভিজলও অনেকটা । তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে খেতে বসল আবার । গরম ভাতের গন্ধটা আর নেই। মরে গেছে গন্ধটা ।
সোঁদা মাটির গন্ধ উঠছে এখন । সুতপার খুব প্রিয় গন্ধ । চোখ বন্ধ করে সেই গন্ধটাই নাক দিয়ে টেনে নিল নীলদীপ ।

তপন বিশ্বাস -মোবাইল -৭৫৯৫৯৪৩৫৫৭

Let us enjoy every day as a new year. This site calls for everyone to be in the realm of creation which can be anything- writing, gardening, drawing, origami even some items created for home decoration that gives you satisfaction and makes the day a new year. That gives meaning to life. Let us share our creations on this page.

View Comments

There are currently no comments.
Next Post