Sankars Creation

 বাজার থেকে এসে কোনোরকমে ব্যাগটা রেখে গিন্নির সঙ্গে একটু ওগো  হ্যাগো করেই বাচ্চা ছেলের মতো রমাপদর চায়ের দোকানে  ছোটা আমার রোজকার কাজ। রিটায়েরর পর থেকেই। পঞ্চাননকে  নিয়ে আমাদের ছয়জনের জমজমাট আড্ডা হয় এসময়। আমার আজ একটু দেরি হওয়ায়  এখনো চা দেয়নি রমাপদ। তার মানে এই সপ্তাহে তিনদিন আমার পেমেন্ট । আমাদের এটাই নিয়ম- যে শেষে আসবে তাকেই পেমেন্ট দিতে হবে। আমি বেঞ্চে বসে অজিতের দিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কি বিষয় চলছে ? অজিত জোরেই বলে উঠলো

-আমার সাধের সোনার পাথর বাটি – (গণতন্ত্র) আমি তোমায় ভালোবাসি। পঞ্চা  মানে জ্ঞানপ্রকাশ (জ্ঞান দেয় বলে জ্ঞানপ্রকাশ) বললো

–  আচ্ছা বলতো ডেমোক্রেসি কথাটা কি করে এলো ?

কেউই কিছু  বললাম না , কারণ জানি এবার পঞ্চার জ্ঞানবাণী শুরু হবে।

-আসলে Democracy দুটো শব্দ মিশিয়ে তৈরী হয়েছে –  Demo আর cracy. ডেমো মানে তো সবাই জানিস -এটা ডেমোন্সট্রেশন এর সংক্ষেপ, আর cracy হোলো গিয়ে Aristocracy র সংক্ষেপ-

-আরিব্বাস -কি দিলে গুরু , বটুক চেঁচিয়ে উঠলো।

-কিন্তু এটা নামালে যখন একটু খেলিয়ে বলো। বটুক পঞ্চার গুণমুগ্ধ সবাই জানি।

-এককথায় আভিজাত্যের প্রদর্শিনী।  পঞ্চা  চায়ের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বললো।

-তাহলে Of the people, For the people,By the people এ peopleটার গণতন্ত্রতে কোথাও জায়গা নেই বলছো?

-আছে, অভিজাতদের কথায় নাচার জায়গায় আছে। Peopleরা এরিস্টোক্রেটের কথায় লাইনে  দাড়াবে , তাড়িয়ে দিলে চলে যাবে মুখ ব্যাজার করে। আরে বাবা আসল people হচ্ছে নেতা, মন্ত্রী । এদের জন্যই সব কিছু।

-মানতে পারলাম না, জয় এর সিগারেটের কাউন্টার পার্ট হাত বাড়িয়ে নিতে নিতে গবু বললো।

এটা  নতুন কিছু না। কেউ না কেউ জ্ঞানদা কে উসকে দিতেই আমরা বলি।

-আসল ব্যাপারটা হলো ……….

-ড্যানসিং খ্যামটা আন্ডার ঘোমটা। জ্ঞানদা কিছু বলার আগেই আমি বলে দিলাম।

সকাল বিকেলে এই কিছুক্ষন বেঁচে থাকার রসদ নিতে আসি। এই একঘেয়ে জীবনের মধ্যে সেই পুরোনো ফেলে আসা ভোরবেলার দিন গুলোকে যেন ছুঁয়ে আসা যায়। তখন স্বপ্ন ছিল, স্বপ্ন কে খোলা আকাশের নিচে মেলে ধরার তাগিদ ছিল। ছেঁড়া মলাটের মধ্যে পুরোনো বইয়ের মতো পড়ে থাকা জীবনটাকে এখন প্রায়ই নেড়ে চেড়ে দেখি। সময় কাটেনা যে। অথচ স্কুল-কলেজের দিনগুলো  কেমন আসতে না আসতেই পার করে দিতাম !

– যাক তোমার লোকসভা ভাঙলো তাহলে।

-বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই  শুরু হয়ে গেলো ? অবশ্য মুখে না মনে মনেই বলি।

এখন অমৃতাকে চটানো মানে দুপুরের জন্য আনা মাটনটার দফা রফা। এমনিতেই বিনুর হঠাৎ চলে যাওয়ার পর মানসিক সমস্যা থেকে ওকে অনেক কষ্টে টেনে আনতে পেরেছি।  এখন যে ওর কি কারণে কখন মেজাজ খারাপ হয় ধরতে পারি না। আজ সল্ট লেকে ওর দিদির বাড়িতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই। ভাবছি বহুদিন সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না , আজ দেখব কৌশিক  গাঙ্গুলির – জুনিয়র কিশোরকুমার। পটলার সিনেমা জ্ঞানটা ভালো।  সেদিন বললো – ‘দেখে আয়’। বহু পুরষের বাস আমাদের উত্তর  কলকাতার  এই পাড়ায়।ডাক নামেরই চল আমাদের মধ্যে।

কাগজ হাতে নিয়ে বাবার ফেলে রাখা যাওয়া ইজি চেয়ারে আরাম করে বসলাম। আচমকা  চোখে ভেসে  এলো গলির মুখে দত্ত বাড়ির মম কাকিমার মুখটা। কি আশ্চর্যের কাণ্ডই না আজকাল ঘটে। চোখ খবরের কাগজের দিকে অথচ দেখছি মম কাকিমা কে। বড্ডো ভালো মানুষ -বিনুর চলে যাওয়ার দিন থেকে অনেক দিন আগলে রেখেছিলেন অমৃতাকে। মায়ের মতো।  এখনকার দিনে  মম কাকিমাদের দেখা পাওয়া  খুব মুশকিল মনে হয়।

– বুড়োদের কেউ পছন্দ করে না কেন বলতো ? সেদিন আমাদের আড্ডার চায়ের দোকানে মৃদুল  আনমনা হয়ে সিগারেট টানতে টানতে জিজ্ঞাসা করল।

– দেখতে খারাপ হয়ে যায় বলে ? আমার তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসা।

-না রে, দেখতে পাওয়াটা  খারাপ হয়ে যায় বলে।  আসলে ভবিষ্যৎ কিছু থাকে না তাই দেখার কিচ্ছু নেই।  শুধু অতীত।  তাই অতীত নিয়েই বেঁচে থাকি।  আর বাকিদের সামনে কত অজানা পথ , হাঁটাবার ইচ্ছে- তাগিদ। তাই- তুই আমি সবাই ফালতু বাকিদের কাছে। ধীরে ধীরে উঠে চলে গেলো মৃদুল। এতো উদাস লাগলো আমার খুব কষ্ট হতে লাগলো ওর জন্য।

আর কোনোদিনই  দেখা হবে  না মৃদুলের সঙ্গে। কয়েকদিন  পরেই খবর পেলাম মৃদুল কিছু না জানিয়েই এক সকালে সবার অজানা রহস্যের কুয়াশায়  ঢাকা  পথটা দেখতে  চলে গেছে।

-এ মাসে এই নিয়ে দুদিন মাটন হয়ে গেল কিন্তু। বড় বড়  চোখ করে আমার দিকে তাকাল অমৃতা। আমি হেসে ফেললাম। 

-বেশি সাহস দেখিয়ো না বলে দিলাম। রীতিমত ধমকানি এবার।

-আবার হাসছো যে বড় ?

– না গো , একটা কথা মনে পড়ে গেলো।  তাই।

– তা শুনি , কি কথা।

– ঠিক এমনি করে তুমি আমার দিকে তাকিয়ে -সেই যে তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য তোমার গানের স্কুল থেকে একটু এগিয়ে গ্রীন  ক্লাব রেস্টুরেন্ট এর পাশের পার্কে  যেতাম না, তুমি একবার আমাকে ঠিক এই কথাটাই বলেছিলে।

– কোন কথাটা ?

– আমি যখন বললাম ,অনেকদিন তো হলো , চলো  তোমার বাড়িতে গিয়ে দিন ঠিক করে ফেলি। তুমি এরকমই চোখ বড় করে বলেছিলে -“বেশি সাহস দেখিয়ো না বলে দিলাম”।

আমার কথায় অমৃতার ঠোঁটের কোণে  আবার নতুন করে মাধবী ফুটে উঠতে দেখলাম।

আমি জানি রাগ  দেখালেও   কখন অমৃতাকে পটানো যায়।  আমার শালীর বাড়ি যাওয়া বাতিল করে সিনেমা দেখার প্রস্তাব  অমৃতার হাসি-ধ্বনি  ভোটে  পাস হয়ে গেলো। সিনেমা দেখে ফেরার পথে দুটো ফিশ চপের প্রস্তাব  মুলতুবি হয়ে রইলো  বটে।  কিন্তু ভরসা হারালাম না।

আজকের দুপুরে মাটন -সন্ধ্যে বেলা সিনেমা দেখা আর ফেরার সময় পাড়ার মদনের দোকানের ফিশ চপ। আহা ! বেশ গেল দিন টা।  অনেক রাত পর্যন্ত বর্তমানে  আমার একমাত্র সন্তান,বিদেশে থাকা  মেয়েটার ফোনের অপেক্ষা করে করে শেষে শুয়ে পড়লাম।

অমৃতা যেন না জানতে পারে এই কথাটা কোয়েল আর আমি খুব খেয়াল রাখি।  বিনু চলে যাওয়ার পর অমৃতাও আজকের বিশেষ দিনটা মনে রাখতে পারে না অবশ্য। অমৃতা  ঘুমিয়ে পড়েছে।  অনেকদিন পর আজ যেন সেই আগেরই আমি আর অমৃতা কিছু মুহূর্তে ফিরতে পেরেছিলাম ফেলে আসা দিন গুলোতে।

আর কতবার এই দিনটা ফিরে আসবে কে জানে ! কিন্তু অমৃতা  কে ফেলে যাবো না আমি….. কিছুতেই না। 

বসার ঘরের ল্যান্ডফোনে টুং টাং আওয়াজ শুনে পা টিপে টিপে উঠে গেলাম।

-হ্যালো বাপি ! সরি। ঘুমিয়ে পড়েছিলে ? কোয়েল লজ্জা পাচ্ছিলো যে সেটা ওর বলাতেই বুঝতে পারছিলাম।

– না -না ,শুই নি , টিভি দেখছিলাম।

কোয়েল কে মিথ্যে বললে কোনো পাপ হবে না

– হ্যাপি বার্থ  ডে টু  ইউ বাপি।

– থ্যাংক ইউ , মামনি।

-সারা দিন কি করলে আজ।

আমার কোয়েল মামনিকে সারাদিনের বর্ণনা দিতেই হবে।   অগত্যা শুরু করি। কথা শেষ করে ফোনে রেখে দিতে গিয়ে হাতে কারোর ছোঁয়া পেয়ে চমকে গেলাম।

-অমৃতা !ঘুম ভেঙে গেলো ?

বোধহয় কোয়েল এর সঙ্গে আর একটু গলা নামিয়ে  কথা বললে ওর ঘুমটা ভাঙতো না। আমার দুটো হাত জড়িয়ে বুকের কাছে নিয়ে অমৃতা বললো

-আমি কোনোবারই ভুলি না গো। এই মাসের আর সতেরো দিন পরেই তো বিনুরও জন্মদিন। তাই আজ তিন বছর তোমাকে হ্যাপি বার্থ ডে  বলি না…. . বলতে পারি না।

মাধবীলতাটা আমাকে জড়িয়ে ধরে নিজে ভিজে যেতে থাকে।  আমিও যে ভিজতে থাকি অমৃতাকে জড়িয়ে। ঝরে যাওয়া ফুলের জন্য সব গাছই বোধহয় কাঁদে -এভাবেই। 

Let us enjoy every day as a new year. This site calls for everyone to be in the realm of creation which can be anything- writing, gardening, drawing, origami even some items created for home decoration that gives you satisfaction and makes the day a new year. That gives meaning to life. Let us share our creations on this page.

View Comments

There are currently no comments.
Next Post