Sankars Creation

সুজাতা দাস

—উফ্! অসহ্য! রোজ একই দৃশ্য। ভালো লাগে না।
একমনে গজগজ করতে করতে সোমা হাঁটা দিল। লোকটা তখনও তাকিয়ে আছে। স্কুলে যাবার অন্য রাস্তাও আছে। কিন্তু এই রাস্তায় যেন মনকেমন করা ভালবাসা। দুপাশে বাঁধানো পুকুর, বুকচিরে চলেছে সর্পিল পথ। দেবদারু, শ্যাওড়া, যজ্ঞিডুমুর, বন্য কাঁটালতার ঝোপেঝাড়ের মধ্যে ভাঙাচোরা ঘরের ধ্বংসাবশেষ।দুই পুকুর পারের এই প্রাগৈতিহাসিক রূপে সোমার দূর্বলতা।
স্কুলের গেটে দেবাশিসের সাথে দেখা।
—সোমাদি! কী ব্যাপার! মুখে এতো দুর্যোগের ঘনঘটা?
–না, তেমন কিছু নয়।
—কিছু তো বটে!
বয়সে ছোটো, কিন্তু সহকর্মী হিসেবে সোমার খুব ভালো বন্ধু। সর্বোপরি ফিলজফার ও গাইড।
—লেটমার্ক পড়ে যাবে। চলো, আগে চাকরিটা বাঁচিয়ে আসি।
—আর বোলো না। একটা লোক। সকাল থেকে সন্ধ্যে পুকুর পাড়ে বসে থাকে। যখনই যাই, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অসহ্য লাগে।
—তোমাকে ভালো লাগে, তাই।
—নাগো, মজার বিষয় নয়। ঐ দৃষ্টি আমি সহ্য করতে পারি না।
—রাস্তা পাল্টাও।
—ওই রাস্তা আমার অক্সিজেন।
নগরায়নের চাপে শহর জুড়ে ইট কাঠের জঙ্গল। এই রাস্তার জঙ্গুলে পরিবেশে মনের এক অদ্ভূত প্রশান্তি। কেজো জগতের গায়ে ভালোলাগার আলতো ছোঁয়া।
—তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে সোমাদি! ও হয়তো ওই ভাবেই তাকিয়ে থাকে। বাড়ি কোথায়?
—বাড়ি! চালচুলোহীন ভবঘুরে। কুঁড়ে। কোনো কাজ-কাম নেই, অন্যের দয়ায় বেঁচে থাকা। আর ফ্যাল ফ্যালে চোখে তাকিয়ে থাকা। অসহ্য!
—তবুও… তুমি যে কারণে ঐ পথ ছাড়তে পারছ না, হয়তো সে কারণেই ওরও বসে থাকা।
—তোমার কল্পনাশক্তির তারিফ করতে হয়! একটা অনুভূতিশূন্য, ভাবলেশহীন লোক!
দেবাশিস ইংরেজি সাহিত্যের একজন মেধাবী ছাত্র। ভালো শিক্ষক। এই মুঠোফোনের জমানায় বইয়ের পোকা। মৃদুভাষী। নানা রঙের মানুষের সাথে মেলামেশা, তার শখ।
—বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, প্রতিটি মানুষই অনুভূতিপ্রবণ। সময় পরিস্থিতি তার প্রকাশ ঘটায়। এখানেই পশুর সাথে মানুষের তফাত।
—বাহ! বেশ বলছো! যে মানুষ শুধু খায় আর ঘুমোয়, তার আবার অনুভূতির প্রকাশ! কিভাবে হবে দেবাশিস?
এতক্ষণ মিটিমিটি চোখে অমল শুনছিল। প্রচ্ছন্ন বিদ্রূপের ভঙ্গিতে হেসে উঠলো।
—সময় তা বলবে।
ক্লাস আছে। আলোচনা বন্ধ করে সোমা ক্লাসে গেল।
বাড়ি ফেরার পথে আবার সেই চোখ। কিন্তু আজ সোমার চোখে জ্বালাটা কম।
বর্ষা বিদায় নিল। তার লাবণ্যের ছোঁয়া এখনও পুকুর নদী মাঠঘাট ঝোপেঝাড়ের পরতে পরতে। সোমার প্রিয় পুকুর পাড়ের জঙ্গলে যৌবনের উচ্ছ্বাস। আরও সজীব আরও প্রাণবন্ত। বুকভরা নিঃশ্বাসে প্রাণের আরাম নিয়ে সোমার প্রতিদিনের পথচলা। লোকটার অদ্ভুত চাহনি, আজ আর ভাবায় না। গা সওয়া হয়ে গেছে।
এসেছে শরত। নীল আকাশে মেঘেদের কত আলাপন। মনে উৎসবের আমেজ। স্কুল থেকে ফেরার পথে আকাশের দিকে তাকিয়ে সোমা বিমোহিত। পশ্চিম আকাশে আজ যেন বসন্ত উৎসব। নানা রঙের হোলি খেলা। অতি প্রিয় পুকুর পাড়ের কাছে সে দাঁড়িয়ে পড়ে। ব্যাগ থেকে মুঠোফোন বার করে একের পর এক ছবি তুলতে থাকে।
—দিদিমণি, ওই পুকুরের দিকে ছবি তুলুন? বেশি ভালো হবে।
বিষ্ময় আর বিরক্তিতে তাকাল সোমা। লোকটা বলছে!
সত্যিই! নিম, দেবদারু, শ্যাওড়া, যজ্ঞিডুমুরকে ঘিরে ফেলেছে বন্য লতায়। পূর্ব দিকের পুকুর পাড়ে যেন ছোট ছোট সবুজ টিলা। এই গোধূলি লগ্নে গোলাপি আকাশ আর সবুজ টিলার প্রতিবিম্ব পুকুরের কালো জলে। মায়াময় এক আদিম জগত।
—কী দিদিমণি? ভালো না?
—আপনি কি করে বুঝলেন? ছবি ভালো হবে?
—আমি তো রোজ দেখি। ভালো লাগে…
করুণ চোখে হাসল সে। সোমা বাধ্য ছাত্রীর মতো বেশ কয়েকটা স্ন্যাপ নিল। অপূর্ব!
যেতে যেতে ফিরে তাকাল। হ্যাঁ, লোকটা তাকিয়ে আছে।মিস্টি হেসে সোমা হাঁটা দিল।

Let us enjoy every day as a new year. This site calls for everyone to be in the realm of creation which can be anything- writing, gardening, drawing, origami even some items created for home decoration that gives you satisfaction and makes the day a new year. That gives meaning to life. Let us share our creations on this page.

View Comments

There are currently no comments.
Next Post