Sankars Creation

তারাপদ খুব বিপদে পড়েছেন। বছর খানেক হলো চাকরি টি ছেড়েছেন।প্রাইভেট ফার্ম- হয়তো রাখতো ও না। প্রায় অসুস্থতা -কামাই। নেহাত স্বভাবে চুপচাপ তারাপদর কাজের সুনামের ফলেই চাকরিটা ছিল. কিন্তু বুঝতে পারছিলেন এভাবে চলে না। চাকরিটা ছেড়েই দিলেন।টাকা -পয়সা যা পেলেন স্ত্রী আর একমাত্র সন্তান-ছেলের সাথে জয়েন্ট একাউন্ট খুলে বিলি ব্যবস্থা করলেন।

স্ত্রী বললেন ছেলের বিয়েটা এবার দিয়ে দাও। আমারও শরীর ভালো না। আমাদের কর্তব্য টা এবার সেরে ফেলা উচিত।
-ওর কি কোন বান্ধবী আছে ? তারাপদ জিজ্ঞাসা করলেন।ব্রাহ্মণ হলেই চলবে কি বলো ? গণ রাশিটা ও দেখা দরকার।
-উফ এই শুরু হলো। আমি জানি একটা ভালো মেয়ে হলেই হলো। ব্যাস। কথাটা শেষ হলো না। উঠে চলে গেলেন। বান্ধবী নিশ্চয় নেই,ছেলে বন্ধুও তো তেমন দেখা পাওয়া যায় না। -তারাপদ ভাবতে লাগলেন।ছেলেটা বড় চুপচাপ। কম কথা বলে। নিজের মতোই সময় কাটায়। অবশ্য সময় আর কতটুকু। সকালে বেড়িয়ে যায় ফেরার কোন ঠিক নেই। সহকর্মী যোগেন বাবু বলে ছিলেন -ছেলেকে বলেন ভালোবাসা টাসা করতে, না হলে বিয়ে দিতে যে কি ঝামেলা মশাই ! আমি তো পাগল হয়ে গেলাম। আজকাল আত্মীয় -বন্ধু কেউই কোনো সম্বন্ধ দেয় না। আসলে সাহস পায় না। দেখছেন তো চারিদিকে কি সব ঘটছে ! ডিভোর্সের মামলা করে উকিলগুলো দম ফেলার সময় পাচ্ছে না। তারপর সেকশন কত যেন আছে সবসমেত একসঙ্গে জেলে পুরে দিচ্ছে মেয়ের বাড়ি লোকেরা।

খুব চিন্তা হচ্ছে। কোথায় এখন খুজবেন মেয়ে। তারপর কি করে বুঝবেন মেয়েটা একসঙ্গে থাকবে কি না ! ছোট শালা মেয়েদের ডাক্তার একদিন বলছিলো-বুঝলেন জামাইবাবু ,অদ্ভুত সব অভিজ্জতা হচ্ছে এখন।

– কিরকম ,কিরকম? তারাপদ কান খাড়া করে বসলেন।
-আরে জানেন, এখন নতুন বিয়ে করে কেউ চট করে সন্তান চায় না। হয়তো বাচ্চা এসে গেছে abortion করতে ছেলের মা- মেয়ের মা একসাথে এসে বলছে এতো তাড়াতাড়ি সন্তানের দরকার নেই। আরো একটু ঘুরুক ফিরুক। কয়েক বছর বাদে দেখা যাবে। abortion হলো। একবছর বাদে মেয়ের মা এসে বলছে – ডাক্তার বাবু আপনি একটু লিখে দিন যে ছেলের বাড়ি থেকে জোর করে করিয়েছে। আগে বুঝতে পারি নি এতো বাজে পরিবার। আমরা ডিভোর্সের মামলা করছি। আবার ইদানিং দেখছি প্রথম বাচ্চা হলো আমার হাতেই। এসময় মেয়েরা বাপের বাড়িতে থাকাই স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে কিছু সমস্যা হলে দেখতে আসে। তারপর বলছে ভালো শিশু ডাক্তার দেখে দিতে। জানলাম শশুরবাড়ী স্থানীয় না। তো আমি বললাম ওখানে আমার সেরকম পরিচিত কেউ নেই। তাছাড়া এখন তো মেয়ে শশুরবাড়ী চলে যেতেই পারে , ওখানেই কোন ডাক্তার খুঁজে নেবেন।
-না ভাবছি এখানেই একটা ফ্লাট বা বাড়ি ভাড়া করে দেব। জামাইকে রাজি করছি। সেইজন্য।
-কেন আপনার মেয়ের শশুরবাড়ী যেতে সমস্যা কি?
– আসলে আমার মেয়ের শশুরবাড়ীতে বাচ্ছাটার সেরকম যত্ন হবে না। আমার মেয়েকেই দেখে না।
– তাই হয় নাকি ? দাদু ঠাকুমা – নিজের পরিবার থেকে আলাদা করে দেবেন ? বাচ্ছাটা নিজের শেকড় ছেঁড়া হয়ে বড় হবে ?
– সে আপনি বুঝবেন না। আসলে আপনার এতো নাম ডাক। এখানে থেকেই মেয়ে আপনাকে দেখাবে। বাচ্ছাটার জন্য আপনি এখানে একজন ভালো ডাক্তার ঠিক করে দিন।

বুঝলেন জামাই বাবু এই হচ্ছে এখনকার অবস্থা। এখন মেয়ের মায়েরা চায় না মেয়ে শশুরবাড়ী থাকুক। বুকুৰ সম্বন্ধ দেখার সময় ভালো করে খোঁজ নেবেন। তারাপদ ঝিম মেরে বসে রইলেন।

পাড়া -আত্মীয়-বন্ধু যাদের কাছেই একটা ভালো মেয়ের খোঁজ করেন সাবাই বলে -দেখছি।হ্যাঁ বুকুৰ মতো ভালোছেলের জন্য সেরকম মেয়ে পেলেই খবর দেবো। একদিন পাড়ার নাটু বাবু বললেন -মশাই লোককে বলে কোনো লাভ নেই। খোঁজ দিয়ে শেষে কোনো সমস্যায় পড়তে চায় না। দেখছেন না চারিদিকের অবস্থা। খবরের কাগজ পড়েন তো ?তার থেকে এখন ম্যাট্রিমোনি সাইট আছে সেখানে দেখুন।

নেট খুলে দেখেন অনেক ঘটক কোম্পানি আছে। বিনা পয়াসাতেও নাম লেখানো যায়। তারাপদ ভাবলেন দেখাযাক বিনা পয়সায় কি হয়। বাড়িতে যে খবরের কাগজ আসে তাদেরই একটা ঘটক কোম্পানি আছে ছেলের ছবি,আঁধার কার্ড ইত্যাদি সবকিছু দিয়ে ও ফর্ম পূর্ণ করে রেজিস্ট্রি করে নিশ্চিন্ত হলেন।

কয়েকদিন বাদেই ঘটক কোম্পানির ফোন। আমাদের অনেক রকম প্যাকেজ আছে, আলাদা আলাদা রেট , নাহলে আপনি নিজে কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। কথাটা ঠিক। অতএব টাকা দিতে হলো। সবকিছুতে গোঁড়ামি না থাকলেও গোত্র,গণ, মাঙ্গলিক কি না এসব না দেখে কিছুতেই বিয়ে দেবেন না। যে সব যোগাযোগ আসতে লাগলো তা দেখে মনে হলো কেউ কি ভালো করে পড়েও দেখে না কয়েক মাস ধরে পাত্রী খুঁজে দেখাটাই কাজ হলো তারাপদ ব্যানার্জির।

পাশের বাড়ির অশোকবাবু একদিন বললেন – “দেখুন আমি তো আপনার পাশের জমিতেই বছর দশেক হলো বাড়ি করে এসেছি। আমার মেয়েটিকে তো আপনি দেখেছেন। আপনার যদি আপত্তি না থাকে –
-সে কি কথা ,আপনি এভাবে বলছেন কেন? আপনার মেয়ে সুমিতা কে ওর ১৪/১৫ বছর বয়স থেকে দেখছি। কি পড়াশোনায় , কি স্বভাব ! এতো সুশ্রী মেয়ে আপনার। কিন্তু কি জানেন অশোকবাবু সে সৌভাগ্য তো আমার নয়। আপনারা যদি ঘোষ না হয়ে ব্রাম্ভন হতেন তাহলে তো আমি নিজেই আপনার কাছে এই প্রস্তাব নিয়ে হাজির হতাম।

কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেও একটু পছন্দ সই কিছু যোগাযোগ হলো না। সত্যিই বন্ধু দীপক এইজন্য হা হুতাশ করতো -সগোত্রে বিয়ে দেওয়া যে কি ব্যাপার তোর ছেলের সময় বুঝবি, যদি না নিজেই পাত্রী ঠিক করে রাখে আর যদি তুই নিজের গোঁড়ামি না ছাড়িস।ওসব গোত্র,ঠিকুজি, কুষ্ঠি মেলালে আরো ঝামেলা হয়ে যাবে বলে রাখলাম। কথাটা যে কঠিন বাস্তব হয়ে দেখা দেবে তা আগে ভাবতে পারেননি তারাপদ।

গিন্নিকে মাঝে মাঝে ডাকেন -এই যে দেখে যাও , এরা আগ্রহ দেখিয়েছে। মোটামুটি চলনসই, চলো দেখে আসি। গিন্নির গারোজ নেই তেমন । তবুও দু তিন জায়গায় জোর করেই নিয়ে পাত্রী দেখে এসেছেন, কিন্তু এটা সেটা করে বাতিল হয়ে গেছে। কখনো আবার মেয়ের বাড়ি থেকে বলে দিয়েছে আমরা এই এলাকা থেকে ওই এলাকার বাইরে বিয়ে দেব না। একটা মেয়ে কে পছন্দ হলো থাকে চন্দননগরে। তারাপদ ফোন করে কথা বললেন।ছেলের সম্পর্কে সব কিছু জেনে খুবই আগ্রহ দেখালো। যখন জানলো ছেলের বাড়ি গাড়িয়া পরিষ্কার বলে দিলো- কিছু মনে করবেন না। এতো দূরে আমাদের আগ্রহ নেই। কি দিন যে হলো- তারাপদ ভাবেন।

আরো কয়েক মাস পরে একদিন আবার অশোক বাবু এলেন। জানালেন মেয়ের বিয়ের মোটামুটি ঠিকঠাক হয়েছে। ছেলে পরিচিত। আপনি নাম বললে চিনবেন কিন্তু এখনো ফাইনাল হয়নি বলে বলছি না। ঠিক সময়ে জানাবো। অন্য কেউ হলে হয়তো কৌতূহল দেখাতো। কিন্তু তারাপদ বাবু অন্যের ব্যাপারে কখনো অনাবশ্যক কৌতহল দেখানো পছন্দ করেন না। এক কাপ চা আর বিসকুট খেয়ে গিন্নির সঙ্গে ঠাট্টা তামাশা করে চলে গেলেন।

এদিকে ঘটক কোম্পানি থেকে ফোন আসা শুরু হয়ে গেলো – আপনার আর অল্প কয়েকদিনের মেয়াদ আছে। যদি রিনিউ করতে চান তাহলে আমাদের এখনই টাকা জমা করুন তাহলে ডিসকাউন্ট পাবেন। গিন্নি কে বলতে গিয়ে সুবিধে হলো না। স্পষ্ট কথা -অতো ঠিকুজি কুষ্ঠি মেলাতে গেলে ছেলের কোনো দিনই বিয়ে হবে না।

আরো কিছুদিন বাদে এক সন্ধ্যায় অশোকবাবু সস্ত্রীক এলেন।হাতে একটা বড় মিষ্টির বাক্স। তারাপদ যত্ন করে তাদের বসতে দিলেন।একবার ভিতরে গিয়ে গিন্নি কে বলে এলেন ওদের আসার কথা। গিন্নি বললেন -তুমি ওদের সঙ্গে কথা বলো আমি একটু চা আর কিছু নিয়ে যাচ্ছি। তারাপদ বললেন -গিন্নি আসছেন।- তারপর কি খবর বলুন অশোক বাবু।খেলা পাগল অশোক বাবু খেলার কথা তুললেন। কিছু পরে গিন্নি ও বসার ঘরে এসে ঢুকলেন চায়ের কাপ আর মিষ্টির প্লেট সাজিয়ে। এটা সেটা গল্প চললো। কিন্তু ওঠার নাম নেই। তারাপদ বিরক্ত হতে লাগলেন। এখুনি আবার কম্পিউটারে বসবেন কয়েকটা পছন্দসই জায়গায় ইন্টারেস্ট পাঠিয়েছেন। তারা উত্তর দিয়েছে কিনা দেখা দরকার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছেলের বিয়েটা ঠিক করতে পারলে বেঁচে যান তারাপদ। শেষে নিজেই বললেন -তা আপনার মেয়ের বিয়ের ব্যাপারটা কতদূর এগোলো? কি একটা অসুবিধা ছিল সেটা মিটে গেছে তো ?

ওরা কিছু বলার আগেই নিজের গিন্নিই বললেন -হ্যাঁ হ্যাঁ , সব ঠিক হয়ে গেছে। সুমি যে ঘরে যাবে ,সেখানে আবার কোন বাধা থাকা উচিত নাকি ? ব্রাম্ভন অ-ব্রাম্ভন আবার কি !সুমি আমার -মানে আমাদের ঘরেই আসছে। তুমি কোনো অমত করো না। আমি জানি বুকুৰ সঙ্গে সুমির অনেকদিন আগে থেকেই …….. একি বিষম খেলে যে একটু জল খাও। চায়ের কাপটা হাত থেকে ঠক করে প্লেটে রেখে ক্যাবলার মতো চারদিকে তাকালেন তারাপদ।

Let us enjoy every day as a new year. This site calls for everyone to be in the realm of creation which can be anything- writing, gardening, drawing, origami even some items created for home decoration that gives you satisfaction and makes the day a new year. That gives meaning to life. Let us share our creations on this page.

View Comments

  • All writings are meticulously composed. In a word, “awesome”. You’re are a mastermind of stories. Please carry on for all of us. Keep Well Dada.

    Noton Da


    • Thanks, dada, I got your comments. It’s framed such a way that trash or spams can’t enter.


      • Once more, please post your excellent poems on the guest writing section.


    • If I were the great writer like you! Every day I wait for your writings. Use of words is amazing. Every day I learn from you Dada.


Next Post