Sankars Creation

“সুজাতা দাস” –

প্রিয়, কঙ্কনা,

“প্রতিভাস”পত্রিকায় তোর লেখা “অরণ্য তাপস” গল্পটা পড়লাম। বিশ্ব উষ্ণায়নের সময়কালে খুব প্রাসঙ্গিক লেখা। বিশেষ বার্তাবহ। সভ্যসমাজ বিনির্মাণে, বুদ্ধিদীপ্ত ভদ্র ও বিকশিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরীর স্বার্থে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়তে হবে। কিন্তু এই ‘আমিত্বে’র রাজত্বে ‘আমরা সবাই রাজার’ মতধারা কী স্বীকৃতি পাবে?সাম্প্রতিক একটা ঘটনা আমার মনে এই প্রশ্নচিহ্ণ এঁকে দিয়েছে।

আমার বাড়ির পশ্চিম সীমান্ত বরাবর সারিবদ্ধ পাইন দেবদারু। কুড়ি বছর বয়সী তন্বী দেবদারুর সবুজ লাবণ্য আমাদের প্রাণের শান্তি, মনের আরাম। প্রতিবছরই বর্ষার শুরুতে তাদের আরো রমণীয় করার তাগিদে কিছু কাটছাঁটের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ডাক পড়ে রহমত চাচার। তার নিপূণ হাতের কৌশলে ঘন্টাখানেকের মধ্যে দুরন্ত তন্বী দেবদারু শান্ত সলজ্জ রমণীতে পরিণত হল। প্রতিবারের মতো অবাঞ্ছিত শাখা প্রশাখার স্থান হয় আমার পাড়ারই এক ডাস্টবিনে। কিন্তু, এবার কেন জানি না, এহেন আবর্জনায় প্রতিবেশীরা ক্ষুব্ধ হলেন। অভিযোগ, তাদের নিত্যদিনের আবর্জনার কি হবে? অথচ ডাস্টবিনের অন্দরের থেকে বাইরেই জঞ্জালের গতিবিধি অবাধ । কিছু তর্কাতর্কি হলো। তারপর চুপচাপ। দিন কেটে গেল নিজের নিয়মে। পরের দিন ঘড়িতে ভখন সকাল দশটা। কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখি দু’জন ভদ্রলোক। তাঁরা নাকি ২নং বরোর সুপারভাইজার। অভিযোগের সুরে জানালেন,গাছের আবর্জনা ডাস্টবিনে কেন? আমরা অবাক! আবর্জনা তো ডাস্টবিনেই ফেলা নিয়ম! না, নিয়ম নাকি পাল্টে গেছে। গাছের বিচ্ছিন্ন ডালপালা রাস্তার যত্রতত্র ফেলা যেতেই পারে, কিন্তু ডাস্টবিনে নয়। ডাস্টবিন নাকি জঞ্জাল ফেলার জন্য! জঞ্জাল জমে থাকলে কোনো বাহক-বাহিত রোগ হবার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু জমে থাকা গাছের ডালপালা থেকে এই সম্ভাবনা নাকি প্রবল! এই ঘোরতর অপরাধের শাস্তি স্বরূপ একশ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এই অদ্ভুতুড়ে নিয়মে হতবাক আমার স্বামী লিখিত নোটিশ ছাড়া জরিমানা দিতে নারাজ। অতঃপর কমিশনারের নামাঙ্কিত জনস্বার্থে প্রচারিত একটি লিফলেট ধরিয়ে দিয়ে পৌরনিগমে দেখা করতে বলেন। সেইসাথে সময়ের তালে তালে জরিমানা অঙ্কও বেড়ে যেতে পারে, এমন হুমকিও দিয়ে যান।এ কোন্ রাজ্যে বাস করি? রাস্তায়, অলিতে-গলিতে ফেলা – ছড়ানো আবর্জনা। দীর্ঘদিনের জমা জঞ্জালে উপচে পড়ছে ডাস্টবিন। শত-সহস্র গৃহস্থালির টুকিটাকিতে পুকুর পরিণত হয়েছে ডোবায়। কারোর কোনো অভিযোগ নেই, নেই কোনো জরিমানা। সবই নিয়মসিদ্ধ, শুধু গাছপালার বিচ্ছিন্ন অংশ —তা নিয়মবিরুদ্ধ।
বুঝলাম।নিয়ম নির্দ্ধারিত হয় ব্যক্তিগত আক্রোশের চাপে।ব্যক্তিস্বার্থে আঘাত লাগলেই আমরা নিয়মের হাত ধরি। বাকি সময় আদিমকালের কীটাণুদের মতো চোখ বুজে থাকি।আমরা চোখ বুজে থাকলেও, পরিবেশ সচেতনতার নামে সভা, সমিতি, স্লোগান পাড়ার মোড়ে মোড়ে…। পরিবেশ সুন্দর না হোক, জনগণের হাততালি তো আছে!!!
কাকস্য পরিবেদনা! আম জনতা আমরা। তায় মধ্যবিত্ত। মাত্র একশ টাকার জন্যে আবার নিজেকে জড়াবো? অতএব বাধ্য নাগরিকের কর্তব্য পালনে একশ টাকা জরিমানা দিতে পৌরনিগমে পা রাখলাম। জরিমানা দিয়ে ঘোরতর অপরাধের পাপ থেকে দায়মুক্ত হলাম। ভবিষ্যতে টাকার বিনিময়ে পৌরনিগমের ভ্যান ভাড়া করতে হবে। তবেই আমার প্রাণ-প্রিয় দেবদারুবৃন্দের সৌন্দর্যায়ন ঘটবে।
বাহ্! বাহ্! আমাদের পৌরনিগম পরিবেশ সচেতনতার এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন। নিয়ম ভঙ্গকারীর কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেই ছাড়লেন। অথচ আবর্জনার পাহাড় প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কিন্তু, হে মহানাগরিক! আমার প্রাণের শহরকে আবর্জনার শহর করে তোলার জন্য আপনার কত জরিমানা ধার্য্য হবে? কে ধার্য্য করবে? সবটাই প্রশ্ন, উত্তর নেই।কারণ এখানে কোনো ব্যক্তিস্বার্থের সংঘাত নেই। তাই আমজনতা চুপ!

তোর “অরণ্য তাপস “এর স্বপ্ন পূর্ণতা পাক। আশায় রইলাম। ব্যক্তি স্বার্থ ভুলে দলমত নির্বিশেষে আমজনতা যেদিন বুকভরে নিঃশ্বাস নেবে… নিঃশ্বাস নিতে সাহায্য করবে… সেদিনের স্বপ্ন দুচোখেে নিয়ে…
এক আকাশ ভালবাসায়….

সুজাতা।

Let us enjoy every day as a new year. This site calls for everyone to be in the realm of creation which can be anything- writing, gardening, drawing, origami even some items created for home decoration that gives you satisfaction and makes the day a new year. That gives meaning to life. Let us share our creations on this page.

View Comments

There are currently no comments.
Next Post