Sankars Creation

অম্লান ভট্টাচার্য

বিশু বাবু বছর দুয়েক হলো অবসর নিয়েছেন | বাড়িতে ওনার ওয়াইফ সতী, এই দুজনের ছোট সংসার| একমাত্র ছেলে ইংলন্ডের নটিংহ্যামে থাকে, বছরে একবার কি দুবার বাড়ি আসে| বিশুর এই ষাটোর্ধ বয়সে একটি মাত্র শখ হচ্ছে বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা| সকাল সন্ধ্যা দুবার তার যাওয়া চাই| সতী অনেক বুঝিয়ে এর পরিবর্তন করতে পারেনি, অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বলেছে দেখ বাপু গাড়ি ঘোড়া বাঁচিয়ে শখ টখ যা মেটার মেটাও, কিছু একটা হলে আমি কিছু করতে পারবো না | এই একটি শখ নিয়েই বেশ ভালোই চলছে| সকালে একবার যায় নটা নাগাদ ফিরে আসে বেলা ১১টার পরে, আবার বিকেল পাঁচটায় গিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় ফেরে| বাকি সময়টা সংসারের কাজকর্ম , বিশ্রাম ইত্যাদি আরো কাজ থাকলে করে নেয়| কিন্তু সম্প্রতি তার দ্বিতীয় সখের জন্ম মূহূ্র্তে আমাদের গল্পের ও একটু মোড় আসে |

দ্বিতীয় সখ শুরু হয় এই ভাবে| একদিন বিশু দাঁড়িয়ে আছে রোজ যেমন থাকে, একজন এসে জিজ্ঞেস করল স্যার সাউথ সিটি মলটি কোন দিকে| বিশু জানতো উত্তরটা এবং সঙ্গে সঙ্গে বলেও দিলেন| পরের দিন সেই একই ব্যাপার, একজন জানতে চাইলো কাকু লেক পুলিশ স্টেশন কোনদিকে, বিশু বলে দিল, তার পরের দিন এবং তার পরের দিন গুলোতে বিভিন্ন প্রশ্ন তাকে উত্তর দিতে হলো| এখন এই ব্যাপারটা বিশুর কাছে বেশ ভালোই লাগে|প্রতিদিনই কেসের সংখ্যা বাড়তে থাকে, একেক দিন এমনো হয় তার ওভার টাইম করতে হয়| আর এই নিয়ে বাড়িতে একপ্রস্থ ঝুট ঝামেলা| সতী তো রেগে মেগে নটিংহ্যামে ফোন করে ছেলেকে সব জানালো| ছেলে অত দূর থেকে কি বা করতে পারে, শুধু বললো আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলবো| আর বলা , এদিকে বিশুর জন্য মানুষের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে| এইভাবে নানারকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, কেউ কেউ কাটাপ্পা কি জানতে চাইছে, কোহলির সাথে গতকাল ওপেন করেছে কে আইপিএলে, সিক্স প্যাক মানে কি, পুতিন কি আবার ফিরে আসবে, বর্তমান অতীত ও ভবিষ্যতের যতরকম প্রশ্ন হয় এই সুযোগে সবাই করে নিচ্ছে| এইসব খবরাখবর লোকাল থানায় পৌছে গেল, বড় বাবু দুজন কনস্টেবল পাঠিয়ে দিয়ে লালাবাজারে ফ্যাক্স করলো| মোটামুটি একটা জমায়েত তৈরী হতে থাকলো | ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কাছে খবর চলে গেল, তারাও লাইভ দেখানো শুরু করলো এবং দিল্লীর মিডিয়াও এতে যুক্ত হয়ে পড়লো|

এরই মাঝে বিশুর একদিন শরীর খারাপ জনিত কারনে রাস্তার উপরেই পড়ে গেল| চারদিক থেকে মানুষ জন চলে এলো, ধরাধরি করে ডাক্তার খানায় নিয়ে গিয়ে ব্লাড প্রেশার ও ইসিজি করা হলো, রিপোর্টে দেখা গেল ছোট খাটো একটা স্ট্রোক হয়েছে| তবে ভয়ের কিছু নেই এখন একদম অখন্ড বিশ্রাম নিতে হবে | বাড়ি থেকে কোনরকম বেড়োনো চলবেনা| সতী তো এসব দেখে মূর্চ্ছা যায় যায়, তবে এরই মধ্যে একটা বিশু স্বাস্থোদ্ধার কমিটি করা হলো, তাতে লোকাল কমিটি থেকে মায় কেন্দ্রীয় কমিটি বানানো হলো, সতীকে করা হলো দপ্তরহীন প্রধান| একটা ফান্ডো খোলা হলো, সকলকে বলা হলো মুক্ত হস্তে দান করতে এই রকম একটি সংকট মূহূ্র্তে|

এদিকে সতী ছেলেকে ফোন করে সবই বললো, ছেলে বললো ও যখন ম্যানচ্সেটারে ছিল খেলা দেখতে তখনই ফেসবুকে দেখেছে, ও এখন আসতে পারবেনা কারন নেপলসে চ্যাম্পিয়ন লিগের টিকিট কাটা আছে আর বাবা তো ভালোই আছে, দেখার লোকজনো আছে তবে চিন্তা কিসের| যাক সতী মোটামুটি আত্মীয়স্বজন সবাই কে বলে টলে দপ্তরহীন প্রধান হয়েই বাড়িতেই স্বামীর কাছে ঘোরাফেরা করতে থাকলো|
এখন গল্প শেষের পথে, কি হলো বিশুর অস্থিরতা দেখে আর অন্য দিকে জনগনের চাহিদা যখন কন্ট্রোল করা যাচ্ছনা, তখন সবাই মিলে ঠিক করলে যে একটা মোবাইল ফোন কিনে দেয়া হোক যাতে জনগনের প্রশ্নের উত্তর বিশু বিছানায় শুয়ে শুয়েই দিতে পারে | কিন্তু সমস্যা আরেকটা আছে সেটা হলো ফোনের নম্বর কি ভাবে জনগনকে জানানো হবে| অনেক চিন্তা করে যা বেড়োলো তা হচ্ছে এই যে রাস্তার মোড়ে বিশুর একটি মূর্তি বসানো হবে আর মূর্তির পাদদেশে ওনার ফোন নম্বরটি দিয়ে দেয়া হবে তাতে মানুষজন ওকে দেখবে আর প্রশ্ন থাকলে ওখান থেকে কথা বলবে| যেই ভাবা সেই কাজ| সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটি রণনীতি ঠিক করে সারা দেশে প্রচারে নামতে বললো| মিছিল মিটিং হবে ,পথসভা হবে এই নিয়ে গান নাটক কবিতা ইত্যাদি লিখতে হবে|

এদিকে বিশু কেমন আছে কেউ খোঁজ খবর নেয়ার সময় পাচ্ছে না, সবাই ভীষন ব্যস্ত, সতী ও এই সুযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে দেখা করার জন্য দিল্লী আর সংলগ্ন আগ্রা হরিদ্বার ইত্যাদি অনেক জায়গা ঘুরে নিচ্ছে, ওদের ছেলে বিদেশে কাজে ব্যস্ত, বিশু বিছানাতেই শুয়ে আছে আধমরা অবস্থায়, তার বুকের উপর একটা মোবাইল ফোন,তার পাশে একজন নার্স বসে বসে ঘুমিয়ে পড়ে, এমন সময় একটা ফোন বেজে ওঠে, ফোনটা ধরতে গিয়ে ফোনটাই মাটিতে পড়ে যায় ,বিশু ফোনটাকে আনতে গিয়ে সে নিজেও মাটিতে পড়ে গেল| বিশুর পরের খবর আমিও বলতে পারলাম না, বিশু মাটিতে শুয়ে, নার্স চেয়ারে বসে ঘুমে ঢুলছে, সতী উত্তর ভারত ভ্রমনে ব্যস্ত, কেন্দ্রীয় থেকে সমস্ত কমিটি মূর্তি স্থাপনে মহাউদ্যোগী, সমস্তরকম মিডিয়া খবর আনা নেয়া করছে. এইভাবে দ্বিতীয় সখ মহা সমারোহে পালিত হচ্ছে দেশ ব্যাপি|

Let us enjoy every day as a new year. This site calls for everyone to be in the realm of creation which can be anything- writing, gardening, drawing, origami even some items created for home decoration that gives you satisfaction and makes the day a new year. That gives meaning to life. Let us share our creations on this page.

View Comments

There are currently no comments.
Next Post