এক পৃথিবী লিখবো বলে
সুজাতা -সুজাতা দাস - বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শেষে শিকক্ষতার সাথে যুক্ত। তিনি শিক্ষক কিন্তু একইসাথে ছাত্রও। প্রাত্যহিক জীবন যাপনের বাইরে খুঁজে বেড়ান নিজেকে। তাই নীললোহিতের হাত ধরে হাঁটতে যান আর শব্দের জলছবিতে আমাদের দেখান সে পৃথিবীকে যেখানে -""আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,. চুনি উঠল রাঙা হয়ে।."
প্রিয়
পাপিয়া,
কাল রাতে দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। সারারাত কথাটা তাড়া করে ফিরেছে। “সৃষ্টিশীলতা ছাড়া আমাদের মানব জীবন অর্থহীন ।” তোর সাথে আমি একমত। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ততা ছাড়া কিছু কী হয়? ভাবলাম লিখতে হবে, আর লিখতে শুরু করলাম! না, সেক্ষেত্রে কবি জয় গোস্বামীর ‘মেঘবালিকা’ র কবির মতোই অবস্থা হবে।
“এক পৃথিবী লিখবো বলে একটা খাতাও শেষ করিনি।”
কবিতার প্রতি আমার ভালবাসা অনেকদিনের। মনে আছে তোর? সেই ইউনিভার্সিটির দিনগুলি? চন্দননগর থেকে বর্ধমান। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে, কত কবিতার বই দুজনে শেষ করতাম। আমাদের সরব কবিতা পাঠ শুনে সবাই অবাক চোখে তাকাতো। হয়তো ভাবতো, এ কোন্ পাগলের দল? যদিও সে পাঠে না ছিল বাক্-শৈলী, না ছিল ব্যাকরণগত শুদ্ধতা। শুধু অনাবিল আনন্দের বাঁধভাঙা ভাবোচ্ছ্বাস।
তারপর সংসার জীবনের জাঁতাকলে কবিতা নিল ছুটি।
দেখা-সাক্ষাৎ হয় কখনো – বা। সময়ের নৌকো বেয়ে একদিন কর্মজীবনে পা রাখলাম। আধা-সরকারি স্কুলে বাংলার শিক্ষিকা। আবার কবিতার সাথে গাঁটছড়া বাঁধলাম। শুরু করলাম পড়া আর শোনা। কিন্তু কবি হয়ে লেখার কথাও ভাবিনি বা বাচিক-শিল্পী হয়ে আবৃত্তি করার কথাও ভাবিনি। হঠাৎই একদিন মনে হলো, আমি কী পারি না সুন্দর বাচন-ভঙ্গিতে কবিতার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে? তখনই সমস্ত দ্বিধা – দ্বন্দ্ব মুছে নিজেকে প্রস্তুত করলাম। আমি কোনোদিন বাচিক – শিল্পী হবো না। হয়তো দশজনেরও মন ভরবে না। কিন্তু আমার আবৃত্তিতে আমার মন ভরছে। এখানেই আমার জয়।
তাই যেদিন লেখার জন্য তাগিদ অনুভব করবো, একটা মিনিট নষ্ট করবো না। অন্তত নিজের আনন্দের জন্যও লিখবো। ইদানীং মুঠোফোনের দৌলতে পড়ার অভ্যাস শিকেয় উঠেছে। সেইসাথে কর্মজীবনের বাঁধাগতে পড়াশোনায় ইতি টেনে হয়ে যাচ্ছি অশিক্ষিত। কিন্তু লিখতে গেলে লিখতে শিখতে হবে। অতএব বই পড়া ছাড়া গতি নেই। শুরু করলাম নীললোহিতের হাত ধরে দিকশূন্যপুরের পথে এগিয়ে চলা। পড়তে পড়তে তাল, লয় ঠিক করে নিজেকে আগে সুরে বাঁধি। হয়তো হঠাৎই একদিন স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে আমার লেখনী সঠিক সরগমে বেজে উঠবে। আমার প্রথম লেখা ভূমিষ্ট হবে তোর পত্রিকায় —কথা দিলাম। ভরসা রাখো বন্ধু। কিছু সময়ের অপেক্ষা। আমি আসছি —. অনেক ভালবাসায়।
সুজাতা ।
View Comments
অবাস্তব
প্রিয় পাপিয়া, কাল রাতে দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। সারারাত কথাটা তাড়া করে ফিরেছে।...
Tapan Biswas
Authorসুজাতা দাসের “এক পৃথিবী লিখবো বলে” লেখা ছোট্ট চিঠিটা বেশ ভাবিয়ে তুললো আমাকে। তার মতো সাহিত্যপ্রেমী হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গন থেকে। তিনি ফিরে আসুন -পড়ুন-লিখুন- শুভেচ্ছা রইল ওনার জন্য ।