Sankars Creation

কুসুমিতা। আমার আজকের গল্পের একমাত্র চরিত্র। অনেক দোষে দোষী। অনেকে বিসম্বাদে আজ বিবাগী।

দোষ তার জন্মলগ্নেই। ওই যে অমাবস্যার আগের রাত! ঘন অন্ধকার। চাঁদ, তারা কেউ তো ছিল না তাকে অভ্যর্থনা করতে। ভাদ্র মাসের বৃষ্টি আর মেঘের গজরানিতে বিরক্ত হয়ে সূর্যদেব আসেননি পরের দিনও তাকে দেখা দিতে। সেই দুঃখ কাটাতে পারেনি মেয়েটা সারা জীবনে। তাই তো মাঝ রাতে উঠে জানলা দিয়ে এক ফালি চাঁদ-এর দিকে তাকিয়ে থেকেছে নির্নিমেষ। লোডশেডিং-এ ছাতে উঠে তারা গুনেছে। আর ভোর না হতেই উঠে পড়েছে সূর্য ওঠা দেখবে বলে। প্রতি দিন, প্রতি রাত… এই ভাবে পার হয়েছে কতো মাস, বছর….

কতো? তা দু’কুড়ি তো হয়েইছে।
তার উপরে সেই ভদ্রলোক! ওই যে রবি ঠাকুর! মাথা খেয়েছেন তিনি মেয়েটার। মেয়েটা হাঁটে, চলে, আর বিড়বিড় করে রবি ঠাকুর আওড়ায়।
ভিড়ের মধ্যে একা। বন্ধুরা যখন হিরের গয়নার গল্পো করে, আর দেখায় নতুন কেনা বিদেশী ঘড়ি, মেয়েটার মন ছুটে যায় কোথায় যেন…

“না চাহিতে মোরে যা করেছ দান/ আকাশ আলোক তনু মন প্রাণ/ দিনে দিনে তুমি নিতেছ আমায় সে মহা দানের যোগ্য করে / অতি ইচ্ছার সংকট হতে বাঁচায়ে মোরে।”

বন্ধু বললাম বটে, কিন্তু বন্ধু কি আছে তার? হয়েছে কি একটিও সারা জীবনে?

যোগাযোগ অনেকের সঙ্গেই। কিন্তু বন্ধুত্ব! তা বোধ হয় এখনও হয়নি। কী যেন কেন! কারও সঙ্গেই বেশিদিন বনে না তার। মন না চাইলেও কথা বলা যায়। দায়িত্ব পালনও করা যায়। বন্ধুত্ব করা যায় কি?

মাঝে মাঝে কাঁদে মেয়েটা। যারা আজ নেই আর যারা থেকেও নেই, তাদের স্মৃতি যখন পিছু ছাড়ে না, তখন….

বাবার মৃত্যুর পরে আত্মীয়, স্বজন সবাই ভেবেছিল, পাগল হয়ে গেছে কুসুম। বাবার মৃতদেহ নিয়ে অল্প বয়সী মেয়েটা তখন মর্গে। সঙ্গে দু -একজন আত্মীয় পরিজন। সদ্য সূর্য উঠেছে। প্রাতভ্রমণে বেরিয়েছেন অনেকেই। সব স্বাভাবিক। “আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্ব ভরা প্রাণ।” শুধু তার বাবা সেখানে স্থান পাননি আজ। গুনগুন করে উঠেছিল মেয়েটা সে দিন, “তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে, / কাটবে দিন কাটবে, কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে,/ ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি- / চরবে গরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।”

জীবনে ওঠা পড়া সবার যেমন হয়, কুসুমেরও হয়েছে। জীবন যেমন সবাইকে অনেক কিছু শেখায়, সেই একই ভাবে শিখিয়েছে তাকেও। সুখ এসেছে, সে সুখ ছাপিয়ে এসেছে অসুখও।
“তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে, তা বলে ভাবনা করা চলবে না/ ও তোর আশালতা পড়বে ছিঁড়ে, হয়তো রে ফল ফলবে না……… শুনে তোমার মুখের বাণী, আসবে ঘিরে বনের প্রাণী / হয়তো তোমার আপন ঘরে পাষাণ হিয়া গলবে না।”

এই এক বদ অভ্যেস কুসুমিতার, নিজের মনে গুনগুন করা। কখনও বা বিড়বিড় করাও। আর নিজের সঙ্গে সময় কাটানো। ওর একটা নিজস্ব সূর্য আছে। একটা নিজস্ব চাঁদ, আর আছে কয়েকটা নিজস্ব তারা।

অনেকেই ওকে স্বার্থপর বলে। কেউ, মিথ্যেবাদী আর কেউ কেউ বলে, অহংকারী। দূরে চলে যায় একে একে।
কিন্তু সেই ভদ্রলোক! ওই যে, রবি ঠাকুর! বড্ড নাছোড়বান্দা। হার মানানো যায় না তাঁকে। কুসুমের কানে কানে গেয়ে ওঠেন,

“বসিয়া আছ কেন আপন-মনে, / স্বার্থনিমগন কী কারণে? / চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি, / ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি / প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে/ আনন্দধারা বহিছে ভুবনে।”

#Manobina #Bengaliblog

Let us enjoy every day as a new year. This site calls for everyone to be in the realm of creation which can be anything- writing, gardening, drawing, origami even some items created for home decoration that gives you satisfaction and makes the day a new year. That gives meaning to life. Let us share our creations on this page.

View Comments

There are currently no comments.
Next Post