Sankars Creation

আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে এই ঘটনাটা শুনেছিলাম বাবার বন্ধু চৌধুরী সাহেবের মুখে । চৌধুরী সাহেব সেই সময় একটি নামি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় চেয়ারম্যান -কাম – ম্যানেজিং ডিরেক্টরএর পদে কর্মরত ছিলেন। পুরো নাম – রুদ্রনারায়ণ চৌধুরী । এক বর্ষার সন্ধ্যায় উনি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। চা খেতে খেতে এই অদ্ভুত ঘটনা টা বলেছিলেন। ওনার ভাষাতেই বলি-

কম বয়েসে বাবা-মা কে হারিয়ে কলকাতায় মামার বাড়িতে মানুষ ।এখানকার কলেজ থেকে বি.এসসি এবং এম.এসসি (অঙ্ক ) নিয়ে পাস করি এবং লন্ডনে কিছুদিন চাকরি করে দেশে ফিরে এসে আই. এ. এস.  পরীক্ষায় বসি । পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করি । সরকার আমাকে একটি শহরে ম্যাজিস্ট্রেটের পদে পাঠায় ।
গন্ডগোলটা হলো আমার নতুন কোয়ার্টার্সটা নিয়ে । আমার পূর্বতন অফিসার তার নিজের কোয়ার্টার্সটা আমায় ভাড়া নিয়ে থাকতে বললেন, সরকারি কোয়ার্টার্সে না গিয়ে। আমি তাতে একেবারে রাজি নয় । সুন্দর প্রাসাদের মতো সাজানো গোছানো বাড়ি। আগে সম্ভবত কোনো জমিদারের বাড়ি ছিল । পরে এটা সরকার কিনে নিয়ে জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের থাকবার কোয়ার্টার্স করেছেন । আরো যেন অদ্ভুত লাগলো আমার পূর্ববর্তী ম্যাজিস্ট্রেটরা কেউই সে কোয়ার্টাসে বাস করেনি, ফলে বাড়িটা এতদিন অব্যবহৃত হয়ে  পড়ে ছিল । ইদানিং, দিনের বেলায় কয়েকটা ঘর নিয়ে সরকারের ভূমিদফতরের অফিস হয়েছে । সন্ধ্যার বহু আগেই সেখান থেকে লোকজন চলে যায় । রাতে তার ধারে কাছে কেউ থাকতে রাজি নয় ।
আমি একটু অবাক হয়ে আমার পূর্বতন অফিসার, মিস্টার বসু কে প্রশ্ন করি – “কি ব্যাপার বলুন তো ? আপনারা কেউ ও বাড়িতে থাকতে রাজি হন নি কেন ?” মিস্টার বসু জবাব দেন,- “জানো ভায়া, জীবনে তো কত জায়গায় ঘুরলাম । সেবার এখানে এসে সরকারি কোয়ার্টার্সেই উঠব বলেই ঠিক ছিল , কিন্তু স্থানীয়দের মুখে তোমার বৌদি যখন জানলো যে বাড়িটা ভূতুড়ে তখন কিছুতেই ও বাড়িতে থাকতে রাজি হলেন না । ফলে, বাড়িভাড়া করতে হলো । ছেলেপুলে নিয়ে ঘর করি, কথাটা ঠিক অবিশ্বাসও করতে পারলাম না ।” আমি একটু বিস্মিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি, – “কথাটা কি বলুন তো ?” তিনি বেশ জোর দিয়ে বললেন -“আমার আগের অফিসার যিনি এসেছিলেন এই জেলায়- তারা কেউ ভূত বিশ্বাস করতেন না । তারা ছিলেন ওই কোয়ার্টার্স । শহরের লোকেরা তাদের নাকি যথেষ্ট সাবধান করেছিল, একে তারা অবাঙালি, তার ওপর ছিলেন খ্রীষ্টান, বয়সও ছিল অত্যন্ত কম । তাই একরকম জেদ করেই ও বাড়িতেই ছিলেন । মাসখানেক নাকি নিরুপ্রদবই ছিলেন ।তারপর হঠাৎ একদিন তিনি সকালে উঠে দেখলেন – বিছানা থেকে তার সাত বছরের ছেলে এবং চার বছরের মেয়ে উধাও । তার স্ত্রী মিসেস রোডস পাগলের মতন্ হয়ে উঠলেন পুত্র-কন্যার শোকে । চারিপাশে খোঁজা খুঁজি চললো ।দুদিন পরে ছেলে-মেয়ে দুটির মৃতদেহ পাওয়া যায় ওই বাড়িরই বাগানের ভেতর, পুকুর পাড় থেকে । শিশুদুটিকে কারা যেন গলা টিপে হত্যা করেছে । মুখে তাদের কালো রক্ত জমাট বেঁধে ছিল।

গল্পটা শুনে তোমার বৌদি আর ওখানে যেতে রাজি হলেন না । তারপর দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভেতর ওই বাড়িটা সম্বন্ধে অনেক গল্প শুনেছি । আমার সাহস হয়নি ওপরওয়ালা দের সেসব ব্যাপার জানাতে । তারা জানেন, আমি তাদের নিদৃষ্ট সরকারি কোয়ার্টার্সেই আছি।”
আমি সব শুনে হাসিতে ফেটে পড়লাম । তারপর বললাম -“এই বিংশ শতাব্দীতে ভূত ? দাদা, আপনি আশস্ত হন ওঁরা আমাকে কিছু বলবে না, কারণ না আছে আমার সঙ্গে স্ত্রী, আর ছেলে-মেয়ে , তাই আমি সম্ভবত নির্বিঘ্নেই ওখানে থাকতে পারবো।” কথাটা মিঃ বসুর ভালো লাগলো না । ভুরু কুঁচকে বললেন – “কথাটা তুমি বিশ্বাস করবে না আমি জানতাম। যাই হোক,তুমি ভালো থাকো এই প্রার্থনা করি ।” সেইদিন রাতের ট্রেনে মিঃ বসু সপরিবারে শহর ছেড়ে চলে গেলেন, আর আমি হলাম জেলার দন্ডমুন্ডের কর্তা ।
সেই রাতটা মি: বসুর ছেড়ে দেওয়া বাড়িতে থেকে পরের দিন উঠে এলাম আমার জিনিসপত্র নিয়ে সরকারি কোয়ার্টার্সে ।বাড়িটা দেখা অবধি একটা অদৃশ্য শক্তি আমাকে টানছিলো ।তাই আমার কর্মচারীদের আপত্তি থাকলেও একা সেই ভুতুড়ে বাড়িতে কাটাতে মনস্থ করলাম । চাকর, লোকজন আমার সঙ্গে কেউ থাকতে পারবেনা স্পষ্ট জানিয়ে দিলো । তাই ঠিক হলো সন্ধের আগেই আমার রাতের খাবার তৈরী করে দিয়ে ঠাকুর আর আর্দালি বিদায় নেবে ।অগত্যা , আমি তাতেই রাজি হলাম । সন্ধ্যের পর সেই নির্জন পুরীতে রইলাম আমি আর আমার প্রিয় জার্মান শেফার্ড, টাইগার । টাইগারকে এক মাস বয়েস থেকে লালন-পালন করেছি, এখন ওর বয়েস দুই বছর। ইতিমধ্যে ও আমায় ছেড়ে একদিনের জন্যেও কোথায় যায় নি । তাই সেদিন সন্ধ্যার পর সেই নির্জনতার মধ্যে টাইগারকে বড়ো আপন বলে মনে হচ্ছিল ।
বারান্দার ওপর আরামকেদারায় বসে একটা বই পড়ছিলাম । টাইগার আমার চেয়ার ঘেষে চুপ করে বসেছিল।হঠাৎ আমার দুচোখ ক্লান্তিতে বুজে এলো ।আমার তন্দ্রা ছুটে গেলো টাইগারএর ঘেউ ঘেউ চিৎকারে । একবার আড়মোড়া ভেঙে নিয়ে পকেটে রাখা পিস্তলটার ওপর হাত রেখে টাইগারের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালাম । দেখলাম , একটি লোক বাগানের মধ্যে দিয়ে আমার বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে । প্রথমে মনেহয়েছিল চোখের ভুল কিন্তু পরমুহূর্তে আমার সে ভুল ভেঙে গিয়ে সিঁড়ির ওপর শোনা গেলো তার পদধ্বনি । টাইগার আগুন্তককে চার্জ করতে যাচ্ছিলো, এমন সময় আমি তার গলার বকলসটা টেনে ধরে বাধা দিলাম। দেখাই যাক না, কি বলতে চায় লোকটা |
পরমুহূর্তে অত্যন্ত সাধারণ শ্রেণীর একটা মানুষ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো । আমাকে সে আভূমি নত হয়ে প্রণাম করলো । আমি প্রশ্ন করলাম – “কে তুমি ? কি চাও ? লোকটি বললো – “আজ্ঞে হুজুর, আমি রঘুনাথ । বংশ-পরম্পরায় এই বাড়িরই মালি ছিলাম আমরা ।এ বাড়ির মালিক, বৈদুর্য্যনারায়ণ চৌধুরী যখন এখানকার বাস উঠিয়ে চলেযান তখন আমার বাবাকে বলে গিয়েছিলেন এই বাড়ির দেখভাল করতে । তারপর সরকার বাড়ি কিনে নিয়েছেন – সেও বহুদিন আগের কথা । কিন্তু বাবুর ছেলে এতই ভালো যে বাগানের মধ্যে মালিদের থাকার জায়গাটা বাদ দিয়ে দীঘির ধার অবধি বিক্রি করেছেন । বাবুর ছেলে কোনোদিন এবাড়িতে আসেননি, কিন্তু আমরা নিয়মিতভাবে এই বাড়িতে আজও সন্ধ্যা-প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে যাই । রঘুনাথ আরো বললো যে  দীর্ঘদিন কেউ এ বাড়িতে বাস করেনি । তাই তাদের প্রদীপ দেখানোর কাজে বিশেষ বাধাও হয়নি। আজও সে অভ্যেসমত এসেছে প্রদীপ দেখাতে ।
লোকটাকে আমি বাধা দিলাম না । রঘুনাথ কাজ করে চলে যাচ্ছিলো । তাকে ডেকে প্রশ্ন করি -“তুমি তো এই বাড়িতে বহুদিন ধরে যাতায়াত করছো, কখনো কিছু দেখোনি ?” সে জানায় যে সে কিছুই দেখেনি । পরে খাটো গলায় আমাকে বলে -“সামনেই রাসপূর্ণিমা ।” “কেন বলো তো ?” রঘুনাথ একটু আমতা আমতা করে উত্তর দেয় -“ঘটনাটা সেদিনই ঘটেছিলো কিনা ! চৌধুরী বংশের সন্তান না হলে এবাড়িতে সে রাতে কেউ প্রাণ নিয়ে থাকতে পারে না – কেবল মালিদের বংশ ছাড়া !” আমি প্রশ্ন করি – “কি ঘটেছিলো সে দিন ?” রঘু বলে -“রাত-বিরেতে সে সব কথা মুখে আনতে নেই ।” কথা শেষ করে সে দুটো হাত কপালে ঠেকায় এবং পেছনের খিড়কির দরজাটা খুলে নিজের বাড়ির দিকে চলে যায় ।
কিছুদিনের মধ্যেই রাতে খাবার দেবার জন্য রঘুনাথকেই বহাল করলাম । এই ভুতুড়ে কোয়ার্টার্সে জীবিত অবস্থায় আমাকে বাস করতে দেখে শহরের অনেকেই বিস্ময় ও কৌতূহল প্রকাশ করলেন । বিলেত ফেরত মন আমার আনন্দিত হলো এই ভেবে যে আমি দেশের লোকের কুসংস্কার ভাঙতে পেরেছি ।
কালের নিয়মে এসে পড়লো রাসপূর্ণিমা । রঘুনাথ সেদিন সকাল থেকেই আমাকে অন্যত্র রাত কাটাতে অনুরোধ করতে লাগলো । তাকে আশ্বস্ত করে বললাম – “তুমি দেখে নিও, আমার কিছু হবে না ।”
অফিস থেকে ফিরে আরামকেদারাটা টেনে নিয়ে বাগানে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিলাম । আকাশে রয়েছে পূর্ণচন্দ্রের আভা। বাগানে সদ্যফোটা হাসুনাহানার গন্ধে চারিদিকে ম ম করছে ।  আমার রাতের খাওয়ার পর রঘুনাথ চলে গেছে ।যাবার আগে সে সামনের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেছে ।
আমার নির্দেশে আজ সারা বাড়িতে জ্বলছে পেট্রোম্যাক্সের উজ্জ্বল আলো । আমার পাশে বসে আছে আমারই একান্ত অনুগত বন্ধু টাইগার।
বসে বই পড়ছিলাম, হটাৎ লক্ষ্য করলাম সামনের বড় গেটটার দিক থেকে আমার দিকে ছুটে আসছে একজন ঘোড়সওয়ার। তার পোশাকটা কেমন যেন অদ্ভুত ধরণের । এ ধরণের পোশাক সাধারনত মানুষ পরতো একশো বছর আগে। কি করে লোকটা বাড়ির মধ্যে এলো সেটাই ভাবছি , ঠিক অমনি সময় আমারই বাড়ির ওপরতলা থেকে কে যেন হেকে বললো – ” “কে আসে ?”  ঘোড়সওয়ার উত্তর দেয় -“আমি রায়চৌধুরীদের তহসিলদার ।”
– “সঙ্গে কে ?”
– “আমার ছেলে।”
আমি তো হতবাক ! এঁরা কারা ? এতো রাতে এরা কোথা থেকে এলো ?
দেখি আমার কোয়ার্টার্সের মধ্যে থেকে নেমে এলেন এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক। পোশাক দেখেই মনে হচ্ছে তিনি খুব সৌখিন মানুষ ছিলেন। কিন্তু সব থেকে বিস্মিত হলাম ভদ্রলোকের চোখদুটো দেখে। দুটো হিংস্র সাপ যেন ফনা তুলে ছোবল দিতে চাইছে তহসিলদারকে । তহসিলদারের পেছনে রয়েছে একটি বছর পনেরো – ষোলোর কিশোর ।
তহশিলদারকে ডেকে নিয়ে ভদ্রলোক বাড়ির পেছন দিকে চলে গেলেন । আমার চমক ভাঙে। পাশে বসা টাইগারকে দেখি চেয়ারে হেলান দিয়ে আরামসে ঘুমুচ্ছে ।
বসে থাকতে থাকতে তন্দ্রা এসেছিলো, উত্তপ্ত মস্তিষ্কের চিন্তার প্রতিফলন নিজের মনের ওপর দেখে নিজেরেই হাসি পেতে লাগলো । মনে হলো – আমি রুদ্রনারায়ণ চৌধুরী, একটা জেলার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, আমার একি দুর্বলতা ! আপন মনে হাসতে হাসতে টাইগারকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম । হাতঘড়িতে তখন রাত বারোটা বেজে গিয়েছে ।কতক্ষন ঘুমিয়েছিলাম জানি না, হটাৎ ঘুম ভেঙে গেলো একটা মর্মভেদী চিৎকারে । আমি এবং টাইগার দুজনেই শুনতে পেয়েছিলাম সে চিৎকার। রাতপোশাক পরেই পিস্তল আর টর্চটা নিয়ে ঘর থেকে টাইগারের পিছু পিছু বেরিয়ে এলাম । আওয়াজটা আসছিলো বাগানের পেছনদিক থেকে ।
আকাশজুড়ে রয়েছে পূর্ণিমার চাঁদ । কিন্তু না, তেমন কিছু চোখে পরলো না । আমার কিন্তু জেদ চেপেছিল সে রাত্রে । এ রহস্যের সমাধান করতেই হবে । খুঁজতে খুঁজতে আমি হাজির হলাম দীঘির ধারে ।হটাৎ অপর পাড়ে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম।একটা বটগাছের নিচে সেই তহসিলদার আর তার ছেলেকে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে, কিছু দূরে আরেক জায়গায় কয়েকজন মানুষ কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ছে । সেই প্রৌঢ়র আদেশে একজন লোক এসে তহসিলদার আর তার ছেলের বুকে পর পর দুটো ছোড়া বসিয়ে দিলো । রক্তে জায়গাটা লাল হয়ে উঠলো ।তারপর মৃতদেহ দুটোকে টেনে নিয়ে একটা কাঠের বাক্সের মধ্যে পুরে ফেললো ।ওদের মতলব বুঝতে পেরে আমি আমার পিস্তল থেকে পরপর ফায়ার করলাম । রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ শোনা যেতে লাগলো । আমার পাশ থেকে টাইগারও অবিশ্রান্ত ভাবে ডেকে চলেছিল । কি যে সে দেখেছিলো তা সেই জানে !

চমক ভাঙলো রঘুনাথের ডাকে । ওঁর গলার স্বর শুনে আমি প্রকিতস্থ হলাম । রঘুনাথ বললো- “হুজুর, কাকে গুলি করছেন ? ওনারা কি মানুষ যে বন্দুকের গুলিতে ওদের কোনো ক্ষতি হবে ।” সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি বটগাছটা তেমনি আগের মতনই দাঁড়িয়ে আছে । কোথায় তহসিলদার আর কোথায় বা তার ছেলে, আর কোথায় বা সেই পৌঢ় ভদ্রলোক আর তার লোকলস্কর !
পশ্চিমে চাঁদ তখন ঢোলে পড়েছে । প্রায় ভোর হয় হয় । আমি রাঘুনাথকে প্রশ্ন করি -“এ আমি কি দেখলাম, রঘুনাথ ?” সে বলে -“বহুদিন আগে এখানে যা ঘটেছিলো ।তবে হুজুর, আমার মনে হচ্ছে আপনি এই চৌধুরী বংশের ছেলে ।আমার ঘরে চলুন, পুরোনো অনেক কাগজ পত্র থেকে হয়তো কিছু জানতেও পারেন ।এই বংশের অনেক জিনিসই আদিত্যবাবু চলে যাবার সময় আমাদের বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন ।
হটাৎ মনেপরে ছেলেবেলায় বাবার মুখে শোনা আমার ঠাকুরদার আসল নাম । তারও নাকি নাম ছিল “আদিত্য “।পরবর্তী কালে তিনি ও নামটা আর ব্যবহার করতেন না ।
বহু পুরোনো কাগজপত্র ঘেঁটে পেলাম একখানা জীর্ণ খাতা । আদিত্য নারায়ণ চৌধুরীর লেখা । তাতে তিনি লিখেছেন -“আমার বাবা, বিদ্যুৎ নারায়ণ চৌধুরীর পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাদেরকেই করতে হবে । রাসপূর্ণির্মার দিন এতবর পাপ ! নিরপরাধ তহসিলদার আর তার ছেলেকে অর্থলোভে খুন করান ! ভগবান কখনই তা সহ্য করবেন না । তহসিলদার আর তার ছেলে প্রতি রাসপূর্ণিমার রাতে এ বাড়িতে আসে, চৌধুরী বংশের ওপর প্রতিশোধ নিতে । অনেক চেষ্টা করলাম ওদের মৃতদেহ দুটোকে খুঁজে বারকরে সৎকার করতে, কিন্তু পারলাম না । তাই, আমার শিশুপুত্র, বিপ্র নারায়ণের কল্যানের জন্য, তাকে নিয়ে যাচ্ছি কলকাতায় আজ থেকে এখানে দেয়া নামও আমি ত্যাগ করলালম ।”
বিপ্র নারায়ণ নামটা পড়েই আমি চমকে উঠলাম। এতো দেখছি আমার বাবারই নাম ! তা হলে, তহসিলদারের হত্যাকারীর বংশধর আমি ? রঘুনাথের সামনে নিজেকে বড় ছোট মনে হতে লাগলো । আদিত্য নারায়ণ যা জানতেন না তা আমি জানি । স্পষ্ট দেখেছি তহসিলদারের আর তার ছেলের লাশ কোথায় পোঁতা আছে ।
সকাল হতেই রঘুনাথের সাহায্যে কয়েকটি লোক যোগার করে জায়গাটাকে খুঁড়ে ফেলতে মাটির তলা থেকে একটা বড়ো ভাঙা কাঠের বাক্স বের হলো । সেটা কোনোমতে খোলা হতে দেখা গেলো দুটো মানুষের কঙ্কাল ।
কোথায় গেলো আমার বিলিতি সংস্কার ! পুরোহিত ডেকে যথাবিধি তাদের সৎকারের ব্যবস্থা করলাম এবং গয়াতেও তাদের পারলৌকিক কাজের ব্যবস্থা করলাম । সরকারের সঙ্গে লেখালেখি করে পরবর্তী কালে আমি চৌধুরী ভিলা কিনে নিলাম । এরপর আর কোনোদিন বিদ্যুৎ নারায়ণ বা তহসিলদারের অতৃপ্ত আত্মার সঙ্গে দেখা হয় নি ।

Let us enjoy every day as a new year. This site calls for everyone to be in the realm of creation which can be anything- writing, gardening, drawing, origami even some items created for home decoration that gives you satisfaction and makes the day a new year. That gives meaning to life. Let us share our creations on this page.

View Comments

There are currently no comments.
Next Post