ছদ্মবেশী
ঠিক ১৫ মিনিট দেরী হয়ে গেলো। চ্যাটে কথা হয়ে ছিল পরমা আসার ১০ মিনিট বাদে শেখর আসবে। তার মানে ৭.৩০ এ আসা উচিত ছিল। কিন্তু শেখর মানে – রিটায়ার্ড মেজর শশাঙ্ক শেখর সামন্তর আরো ১৫ মিনিট দেরি হলো রাস্তায় হটাৎ সাইকেল থেকে পরে যাওয়া এক ভাদ্রলোক কে সাহায্য করতে গিয়ে। ইস পরমা চলে গেলো না তো ! খুব উদ্বিগ্ন হয়ে যে বেঞ্চটা তে পরমার নীল ব্যাগ টা রাখার কথা সেদিকে হনহন করে হাটতে লাগলেন। ঐ তো একটা নীল ব্যাগ। যাক বাবা শেষ পর্যন্ত দেখা হবে। আজ প্রায় সাত আট মাস হলো পরমার সঙ্গে চ্যাট করেছেন সামন্ত সাহেব। মেয়েটাকে মনে ধরেছে। ২৫/২৬ বয়স , ফিজিক্স এ মাস্টার ডিগ্রী – সঙ্গে গান জানে , দেখতে বেশ সুন্দর। আর যেটা তিনি চান -এক সন্তান না, একটা ইঞ্জিনিয়ার ভাই আছে আর একটা বিবাহিত দিদি আছে। সব কিছু ঠিকঠাক এগোলে বৈশাখে ই বিয়েটা পাকা করে ফেলতে হবে। একটু দূরে দাঁড়ালেন। এরকমই কথা ছিল যে পরমা একটু দূরে থাকবে, দূর থেকে দেখবে- তিনি রুমাল বার করে মুখ মুছলে পরমা এগিয়ে আসবে। যদি পরমাকে দেখতে পান সামন্ত সাহেব জানেন যে বাকিটা ম্যানেজ করা কোনো অসুবিধাই হবে না।
উল্টো দিকের বেঞ্চটাতে বসে পাইপ টা বার করতে গিয়ে খেয়াল হলো একজন তার কাছাকাছি – প্রায় ৬৪/৬৫ বছরের এক ভদ্রলোক ব্যাগ রাখা বেঞ্চিটার ওপর নজর রেখে বসে আছেন। দেখেতো মনে হচ্ছে বাঙালি , কিন্তু এখানকার বাঙালি হলে তো চিনতেন। নতুন এসেছেন নিশ্চয়ই। -গুড মর্নিং , আমি পাইপ ধরালে আপনার কি অসুবিধা হবে ? ভদ্রলোক মাথা নাড়লেন। সামন্ত সাহেবের দিকে না তাকিয়ে বললেন – আপনি ধরাতে পারেন আমার্ সিগারেটের নেশা আছে। একটু অন্যমনস্ক কি ! বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। আপনি কি কারোর জন্য অপেক্ষা করছেন -সামন্ত সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন। – হ্যাঁ , খুব সংক্ষিপ্ত উত্তর এলো। -সেরেছে পরমা কি এই লোকটাকেও আসতে বলেছে নাকি !
-আপনি কি এখানে নতুন এলেন? সামন্ত সাহেব কৌতূহল চেপে রাখতে পারলেন না।
-না, না, এখানে জামাই ট্রান্সফার হয়ে এসেছে,তার কাছেই এসেছি কদিনের জন্য।
– কি নাম আপনার জামাইয়ের? সামন্ত সাহেব কথা বাড়াতে চাইলেন।
-আপনি চিনবেন না। দুদিন হলো এসেছে। বোঝা গেলো ভদ্রলোক কথা বাড়াতে চান না। কেবলি ঘন ঘন ঘড়ি দেখছেন আর নীল ব্যাগ টার দিকে তাকাচ্ছেন। সামন্ত সাহেব আশেপাশে দেখছেন -পরমা কি এলো ! ৮.৩০-৯.০০টা , সাড়ে নটা ….. নাঃ আর অপেক্ষা করে লাভ নেই। পরমার দেখা নেই। কিন্তু যদি নাই আসে তবে নীল ব্যাগ টা এলো কি করে ! সামন্ত সাহেব ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না।
পাইপটা আবার ধরালেন। এবার উঠতে হবে। কিন্তু ব্যাগ টা তাহলে কি পরে কেউ নিতে আসবে ? তার চলে যাবার অপেক্ষায় কি পরমা লুকিয়ে বসে আছে ? ধারে কাছে তো কোনো সেরকম মেয়েই চোখে পড়ছে না।
-আচ্ছা দেখুন উল্টো দিকের বেঞ্চ টায় কেউ একটা নীল ব্যাগ ফেলে রেখে চলে গেছে। আপনি দেখেছেন কাউকে?
লোকটার থেকে কোনো উত্তর আসলো না।
দাস বাবুকে তার দিকে আসতে দেখে হাত নাড়লেন সামন্ত সাহেব।
-কেমন আছেন ? শরীর টা তাহলে ভালো হলো. ওহ অনেকদিন ভুগলেন। যা হোক ওষুধ ঠিক মতো খাচ্ছেন তো ?
দাস বাবু বিশদে তার অসুখের গল্প শুরু করলেন। এই এক সমস্যা বাঙালি দের। রোগের গল্প শুরু হলেই আর থামতে চায় না।
-পাশের ভদ্রলোক কখন যে উঠে গেছেন খেয়াল করেন নি। হটাৎ নজরে এলো লোকটা অনেকদূরে – নীল ব্যাগ টা হাতে ঝুলিয়ে হেঁটে চলেছে।
সামন্ত সাহেব বোকার মতো তাকিয়ে রইলেন।
-আজ তোমার মর্নিং ওয়াক এ এতো দেরি হলো যে ! বাড়ি ফিরতেই নাতির কড়া শাসনের মুখোমুখি হতে হলো।
সামন্ত সাহেব পুরো ঘটনা টা চাপা দিতে বললেন -আজ তোমার ছুটির দিন, জানি দেরি করে উঠবে তাই।
-এসো তোমার জন্য চা নিয়ে বসে আছি।
-তুই শুরু কর আমি একটা কাজ সেরে আসছি।
কম্পিউটার খুলে একটা মেসেজ দিলেন পরমা কে -তোমার নীল ব্যাগটা দেখলাম কিন্তু তুমি এলে না কেন ? আমার ফোন নম্বর দিলাম। কথা বোলো খুব জরুরি দরকার।
-চা খেতে খেতে কাগজ টা খুলে বসলেন সামন্ত সাহেব। হটাৎ ফোন টা বাজলো।
শুনতে পেলেন এক ভদ্রলোকের গলা। একটু শেখর কে দিন তো।
-হ্যালো আপনি কে বলছেন ?
-আমি পরমার বাবা বলছি।
-ওহ ! তাহলে আমরাই পাশাপাশি সকলবেলা বসে ছিলাম।
-আপনিই শেখর! ভদ্র্লোক এর গলায় একসাথে বিস্ময় -হতাশা আর রাগ একসাথেই প্রকাশ পেলো।
-আরে দাঁড়ান দাঁড়ান। আমি শেখর নই। মানছি আমি শেখর এর ছবি আর নাম নিয়ে আপনার মেয়ের সঙ্গে এতদিন যোগাযোগ করেছি। আসলে আমার নাতিটা কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলো না। ওর পছন্দ মতো মেয়ে পাওয়া যাচ্ছিলো না। আমি তাই ফেস বুক দেখে ওর নামে প্রোফাইল খুলে ব্যাপার টা এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি। আপনার ঠিকানা টা দিন শেখর কে নিয়ে আমি দেখা করছি আপনার মেয়ের সাথে। যদি আপনাদের অমত না থাকে তাহলে এই বৈশাখেই …..
-কার সাথে কথা বলছো এতো দাদু? চা তো ঠান্ডা হয়ে গেলো। হটাৎ শেখর ঘরে ঢুকে পরে আরেকবার দাদুকে শাসনের সুযোগ ছাড়লো না।
View Comments
Shadow
ঠিক ১৫ মিনিট দেরী হয়ে গেলো। চ্যাটে কথা হয়ে ছিল পরমা আসার ১০ মিনিট বাদে শেখর আসবে। তার...