Sankars Creation

সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর হাত থেকে ছোটগল্প প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় পুরস্কার নেবার সময় পা’দুটোর সঙ্গে হাতদুটোও কেঁপে উঠেছিল তার । অতবড় সাহিত্যিক ! ভয় করছিল খুব । গলা শুকিয়ে কাঠ ততক্ষণে । আশাপূর্ণা দেবী বলেছিলেন “তুমি খুব ভালো লিখেছ । গল্পটা যেমন ভালো তেমনি লেখার হাতও বেশ ভালো । আমার মনে হয় তুমি মানুষের কথা বলবে ভবিষ্যতে । তবে ভাষার একটু উন্নতি করতে হবে তোমায় । বাংলা সাহিত্য বেশি করে পড়বে । আজ যে প্রথম পুরস্কারটা পেলে না সেটা ভুলে যেও । মনে রেখো সাহিত্যের ময়দান তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
দেবেশ সাহিত্যের ছাত্র নয় । সায়েন্স নিয়ে কলেজে পড়ছে তখন । ত্রিদিব বলেছিল, “তুই সাহিত্য নিয়ে পড়লেই ভাল করতিস, বড় সাহিত্যিক হতে পারতিস ভবিষ্যতে । সায়েন্স নিয়ে পড়ে একটা চাকরি নিশ্চয়ই পেয়ে যাবি । ব্যস ! তোর প্রতিভার ইতি।”
চাকরি তার খুবই দরকার ছিল । বাড়ির জন্য । মায়ের জন্য । নিজের জন্যেও । বি,এস,সি পাশ করে চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করেছিল সবার মতোই । সঙ্গে ছাত্র পড়ানো তো ছিলই । ইচ্ছে থাকলেও সাহিত্যচর্চা তেমন হচ্ছিল না । শুধু মনের কোণে ইচ্ছেটা উঁকি দিত মাঝে মাঝে । সাহিত্যিক বনফুল আর আশাপূর্ণা দেবীর স্বাক্ষর করা শংসাপত্রটা দেখত আর ভাবত একদিন সে সাহিত্যিক হবেই । কত মানুষের কথা জমে আছে বুকের গভীরে । নিজের কথাই বা কম কি ! বুকের মধ্যে জমে থাকা বেদনাগুলো বেরিয়ে আসতে চায় যে ।
চাকরি পাবার পর সংসারের জোয়ালটা যেন আরো বেশি করে চেপে বসেছিল কাঁধে । আলগা হল না কোনদিন । ক্রশবিদ্ধ যীশুর মতো সে ঝুলতে লাগল সংসার আর কর্মক্ষেত্রের মধ্যে ।
অনেক বছর পর লিখতে শুরু করেছিল আবার । অনেকগুলো স্বপ্নভঙ্গের পর বুকের ভেতরটা যখন উথাল পাথাল করত তখন লেখার জন্য হাতটাও নিশপিস করত । নিজের যন্ত্রণার কথা ভাবতে ভাবতেই মানুষের কষ্ট, মানষের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা ভাবতে শুরু করেছিল ।
ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখতে ভালই লাগে । লেখার প্রশংসাও পেয়েছে অনেকের কাছে থেকে । বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা পাঠিয়েছে । ছাপাও হয়েছে অনেকবারই । কেউ কেউ লেখা চেয়ে নিয়েছে । পরিচিত মহলে ওর লেখার কদর আছে । গুণমুগ্ধ পাঠকও আছে । তবু কোথায় যেন খামতি থেকে গেছে । সিঁড়িভাঙা অংকটা সে ভাল করতে পারলেও জীবনের সিঁড়ি ভেঙে উপরে ওঠার অংকটা জানতে পারেনি কোনদিন । সে সিঁড়িটা চেনারও চেষ্টা করেনি দেবেশ । লেখালেখি করে গেছে মনের খোরাক জোটানোর জন্যে । কখনো জীবনকে খুঁজে পাওয়ার জন্যে । এভাবেই জীবনের এতগুলো বছর কেটে গেছে । অনেকদিনের জমে থাকা একটা দীর্ঘশ্বাস হঠাৎ বুক চিরে বের হয়ে এল যেন । বন্ধ দরজা ধাক্কা দেওয়ার মতো একটা শব্দ হল কোথাও। কে জানে কোথায় !
শরীরটা ভালো যাচ্ছে না ক’দিন ধরে তাই দু’দিন অফিসেও যায়নি সে । পাশের বাড়ির ফুলের বাগানে জবা গাছটার একটা ডালে বসে দুটো টুনটুনি পাখি পরস্পরকে আদর করছে দেখে চাপা একটা দুঃখে বুকটা মোচড়াতে লাগল শঙ্খচূড়ের গ্রাসে আক্রান্ত বাস্তুসাপের মতো ।
বাবাই পুনে গেছে ক’দিন আগে । ছেলেটা ওর মতোই বেড়াতে ভালবাসে । যাক । মাঝে মাঝে ভ্রমণে যাওয়া ভালো । মানুষ চিনতে, বাইরের জগতটাকে জানতে ভ্রমণের বিকল্প আর কিছু নেই । অফিসের নতুন ছেলেটা বলছিল, “আপনার ছেলে ডেটিং করতে গেছে । আজকাল অনেকেই ডেটিং করতে যাচ্ছে পুনে,বম্বেতে ।” দেবেশের বিশ্বাস হয়নি কথাটা । ওর ছেলের উপর বিশ্বাস আছে । আবার চিন্তাও হচ্ছে এখন । দিনকাল পাল্টাচ্ছে । নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এখন মোবাইল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে । তাদের সামনে যে রঙিন জগতটা, সেটা হাতছানি দিয়ে ডাকে না । গ্রাস করে নেয় । এখনকার প্রজন্ম বই পড়ে না । কমপিউটার আর মোবাইলে ঝড় তোলে দিনরাত । দেবেশ কতদিন ছেলেকে বলেছে, “রবীন্দ্রনাথ, কাল মার্কস নাই বা পড়লি, যা ভালো লাগে তাই পড় । বই পড়লে জ্ঞান যেমন বাড়ে মনোসংযোগও নিবিড় হয় । চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে, ভাষার উপরে দখল বাড়ে।”
মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল খবরের কাগজে একটা ছবি দেখে । তিনটে শিশু নদী পেরচ্ছে মায়ানমার- বাংলাদেশের সীমান্তে। সবচেয়ে বড়টির বয়স ছয় কি সাত বছর হবে । ওর কোলে দুবছরেরও কম বয়সের একটা শিশু । তৃতীয় শিশুটির বয়স হবে চার কিংবা পাঁচ বছর । ওরা শরণার্থী । মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে । ওদের কোন দেশ নেই । মায়ানমারের বৌদ্ধদের চোখে ওরা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী । তাই অনেক বছর ধরেই মায়ানমারে চরম বৈষম্যের শিকার ওরা । দীর্ঘদিনের বঞ্চনা মানুষকে বিদ্রোহী করে তোলে । উগ্রবাদী, আতঙ্কবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী হয় মানুষ । রোহিঙ্গা মুসলমানদের কোন দেশ নেই, নাগরিকত্ব নেই । মায়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে বিদ্রোহী রোহিঙ্গা মুসলমানদের । নিরীহ নারী-পুরুষ, শিশুরা ছুটছে প্রাণ বাঁচাতে ।
যাদের দেশ থাকে তারাই শুধুমাত্র দেশপ্রেমিক হতে পারে । অভাবী মানুষের কোন দেশ হয় না । ওরা তরলের মতো । যখন যেখানে আশ্রয় জোটে তখন সেটাই তাদের ঘর । খাদ্যের জন্যে, বাঁচার জন্যে তারা দেশান্তরী হয় । ধর্মের কারণেও মানুষ দেশান্তরী হয় । ১৯৪৭ সালের দগদগে ঘা এখনও এ দেশের শরীরে রয়ে গেছে । ধর্মের ভিত্তিতে একটা দেশ দু’টুকরো হয়ে গিয়েছিল সেদিন । রাতারাতি উদ্বাস্তু হয়ে গিয়েছিল অসংখ্য মানুষ । ওদের কি দেশ ছিল না ? ধর্ম কি মানুষে মানুষে বিভেদ করতে শেখায় ? আজকাল এমন অনেক প্রশ্নই দেবেশের মাথায় ঘোরাফেরা করে । বয়স হলে বোধহয় এমনটা হয় । যখন নিজের জীবনের চাওয়া পাওয়ার প্রায় কিছুই থাকে না তখন সমাজের জন্যে ভাবে মানুষ । পৃথিবীর জন্যে ভাবনা হয় ।
মোবাইলটা বাজছে । হাত বাড়িয়ে তুলে দেখল জ্যোতিষের ফোন । অবাক হল খানিকটা । কয়েক বছর ধরে ওর সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই । কলেজের সহপাঠী, সেই সূত্রে বন্ধু বলা গেলেও ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়নি দেবেশের মনের । শিয়ালের মতো ধূর্তামি আর হায়েনার মতো খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসির জন্যেই ওকে কোনদিন পছন্দ করে না দেবেশ । ওকে এড়ানো যায় না কারণ ওর নাছোড়বান্দা স্বভাব । বিয়ে থেকে সন্তানের পড়াশুনা সব ব্যাপারেই জ্যোতিষ ওকে জড়িয়ে ফেলছিল । ও বোধহয় প্রমাণ করতে চেষ্টা করত দেবেশ ওর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু । জ্যোতিষের বাবার মৃত্যুর সময় দেবেশ যেভাবে পাশে থেকেছে সেভাবে আত্বীয় স্বজনরাও কেউ থাকেনি । কিন্তু নিজের বিপদের দিনে দেবেশ কখনো জ্যোতিষকে ডাকে না ওর স্বভাবের জন্যে । অন্যের পারিবারিক ব্যাপারে নাক গলানো ওর চিরকালীন স্বভাব । আলটপকা মন্তব্য করে যখন তখন । বছর খানেক আগে দেবেশ জ্যোতিষের স্ত্রী সমর্পিতাকে বলেছিল ওর এ ধরনের স্বভাবের জন্যে ওকে ও পছন্দ করে না । সেই থেকেই জ্যোতিষ আর ফোন করেনি । দেবেশও করেনি ।
-হ্যালো । ফোনটা রিসিভ করে দেবেশ ।
– জ্যোতিষ বলছি । কেমন আছিস ? অনেকদিন ফোন করিস না । অবশ্য আমিও খুব ব্যস্ত থাকি তাই ফোন করা হয় না আমারও। মিতুর কাছে তোদের খবর পেয়ে যাই সব । ঈশিতার সঙ্গে মিতুর তো প্রায়ই কথা হয় । শুনলাম তোর নাকি শরীর খারাপ ?
জ্যোতিষ ওর বিয়ের সময় থেকে শুরু করে বিয়ের পরেও শ্বশুরবাড়ি থেকে গুছিয়ে আদায় করেছে । দু‘দুটো ফ্লাটের মালিক এখন । কী করে হল জানার চেষ্টা করেনি দেবেশ । দেবেশ ওর শ্বশুরবাড়ি থেকে ঈশিতা আর ওর কিছু পোশাক-আশাক ছাড়া আর কিছু আনেনি । ঈশিতা অনেককিছু এনেছিল সঙ্গে করে । নানা ধরণের অসুখের সঙ্গে এক জটিল মনস্তত্ত্ব । ঈশিতার লোভ ও লাভের জটিল মনস্তত্ত্ব দেবেশ বোঝে না । জ্যোতিষের সঙ্গে দেবেশের ইদানীং যোগাযোগ না থাকলেও জ্যোতিষের স্ত্রী সমর্পিতার সঙ্গে ঈশিতার যোগাযোগ আছে জানে দেবেশ । সে নিয়ে ওর কোন মাথা ব্যথা নেই । যার যাকে ভাল লাগে সে তার সঙ্গে কথা বলতেই পারে । কাউকে ভাল না লাগলেও তো কখনো কখনো তার সঙ্গেও কথা বলতে হয় ।
– হ্যাঁ, শরীরটা ক’দিন ধরে একটু খারাপ । তেমন কিছু না । বয়স হচ্ছে তো । তোর খবর বল ।
-আমার খবর আর কী ! টেনেটুনে চলে যাচ্ছে । জিএসটি নিয়ে একটু চাপে আছি ।
-তোদেরও জিএসটি লাগবে ?
-হ্যাঁ রে । খাতাপত্র সব রেডি রাখতে হবে । কাজ বাড়ল অনেক ।
দেবেশ অনেক কথা বলতে পারত, বলল না । কথায় কথা বাড়বে । ওপার থেকে মাঝে মাঝে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠবে ইডিয়েটটা।
– কিরে তিন তালাক তো নিষিদ্ধ হয়ে গেল ? তোর তো ওদের উপর খুব দরদ । এটা ভাল হল না খারাপ হল বল কিছু । শোনার ইচ্ছে না থাকলেও অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল সেই বিখ্যাত হাসি । হায়েনার হাসির থেকেও যা পীড়াদায়ক ।
– কেন ? আমি কি ওদের তিন তালাকের পক্ষে ছিলাম নাকি ! ওদের দারিদ্র, ওদের অশিক্ষার জন্যে ওরা অতটা পিছিয়ে পড়েছে বলে ওদের জন্যে ভাবা বা সহানুভূতি দেখানোর মানে এই নয় যে ওদের কুসংস্কার এবং ধর্মান্ধতাকেও সমর্থন করি । অশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত মানুষকে কিছুদিনের জন্যে বোকা বানানো যায় , চিরদিনের জন্যে বোকা বানানো যায় না । যদি যেত তবে মানব সমাজের অগ্রগতি হত না । তিন তালাকের মতো একটা অচল পদ্ধতি, একটা স্বার্থান্বেষী মানবগোষ্ঠী আঁকড়ে ধরে রেখেছিল এ দেশে । অন্যান্য দেশে কবেই পরিত্যক্ত হয়েছে । বেটার লেট দেন নেভার- এটাকে তো সবারই স্বাগত জানানো উচিত । প্রায় এক নিঃশ্বাসে এতগুলো কথা বলে হাঁপিয়ে গিয়েছিল দেবেশ । ফোনটা কেটে দিল সে ।
ঈশিতা জানতে চাইল, “কার ফোন ?”
-জ্যোতিষের ।
-জ্যোতিষদাকে জিজ্ঞেস করতে পারলে না কোন ডাক্তারকে দেখাবে ! ওনার তো অনেক ডাক্তারের সঙ্গে জানাশোনাও আছে শুনেছি ।
– কী হত জিজ্ঞেস করে ? ওতো দালালি করে ডাক্তারদের হয়ে । কমিশন খাবে ডাক্তারের থেকে । ও কখনো ভাল ডাক্তারের খবর দেবে ?
– না, না । জ্যোতিষদা তোমাকে ঠিক খবরই দিত ।
– তুমি জ্যোতিষকে কতটুকু চেনো ? স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজ ও করে না ।
ঈশিতা কিছু বলতে যাচ্ছিল । ওকে থামিয়ে দিয়ে দেবেশ বলল, “দাঁড়াও,বাবাইকে একটা ফোন করি ।“
অনেকবার চেষ্টা করেও বাবাইকে ধরা গেল না । একটা কথাই শোনা যাচ্ছিল বারে বারে । “দি নাম্বার ইউ হ্যাভ ডায়ালড ইজ কারেন্টলি সূইচ অফ ।”

ক’টা দিন খুব টেনশানে কাটল দেবেশের । গুরু আর গুরুং নিয়ে উত্তপ্ত সময়ে ছেলেটা বাইরে । ঠিকমতো খবরও পাচ্ছিল না ওর । আজ সকালে বাবাই ফেরার পর থেকে অনেকটা চাপমুক্ত মনে হচ্ছে । অফিসে এল বেশ কয়েকদিন বাদে । অফিসে আসার সময় মাথাটা একটু ঘুরছিল । ছেলে এসে গেছে এখন । এবার ডাক্তার দেখাতে হবে । তেমন কিছু হলে না হয় দু’চারদিন নার্সিং হোমে থাকবে । অফিসে আজকাল খুব কাজের চাপ । ওরই মধ্যে বাল্যবন্ধু সুবোধের ফোন । দেবেশ ক্লান্ত গলায় বলল, “হ্যালো, বল ।”
“কিরে কী হয়েছে তোর ?” যথেষ্ট উদ্বিগ্ন সে ।
-তেমন কিছু না । ক’দিন ধরে একটু উইক লাগছে । খেতেও ইচ্ছে করছে না । ঘুম ঘুম পাচ্ছে খুব ।
– হুম্‌ম । ডাক্তার দেখিয়েছিস ?
– না, এখনও দেখানো হয়নি । দেখাব ।
– এই শোন, দেখাব টেখাব বলবি না । আজই ডাক্তার দেখাবি । তোর বউ – ছেলে কেমন আছে ?
– ওরা ভালই আছে । ছেলে বেড়াতে গিয়েছিল । আজই ফিরেছে । তোর বউ, মেয়ে ওরা কেমন আছে রে ?
-ওরা তো সবসময়ই বিন্দাস থাকে । এখনও আছে ।
– আর তুই ?
– আমি ? আমি গরু আর গুরু নিয়ে ভালই আছি ।
-মানে !
-মানে আবার কী ! দেখলাম টোলে মানুষ তৈরি হচ্ছে না একটাও । তাই টোল তুলে দিয়ে গোয়াল বানিয়েছি । তিনটে গরু ভালই দুধ দিচ্ছে । গাধা পিটিয়ে মানুষ বানাতে তো পারলাম না । এখন মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করছি । আয়ও ভালই হচ্ছে ।
– আর গুরু ?
– তুই ব্যাটা একই রকম রয়ে গেলি । চট করে তোর মাথায় কিছু ঢোকে না । আমার বউ এখন গুরু ভজনা শুরু করেছে । শুধু করেছে না আমাকেও সামিল করেছে ওর গুরু ভজনায় । বলে, আধ্যাত্মিক গুরু ছাড়া নাকি মুক্তি নেই । তাই জোর করে দীক্ষা নেওয়ালো । কি আর করি ! টিভি সিরিয়ালের চরিত্রগুলোর মতো দুটো বউ তো নেই,একটাই মাত্র বউ । তাই ওর কথা শোনা ছাড়া আর উপায় কী বল ? যাক, শুনলি তো আমার কথা । আজকেই ডাক্তার দেখাবি । কাল আবার ফোন করব ।
সুবোধ এমন মজা করেই কথা বলে । এতটুকু বদলাল না ও । রসেবশে আছে বেশ । মনের কোণে কোনো দুঃখ থাকলেও সেটা লুকিয়ে রাখতে জানে । সে যদি ওরকম থাকতে পারত তবে বেশ হত । সব মানুষ রসেবশে থাকতে পারে না । মানুষ আজকাল হাসতেই ভুলে যাচ্ছে । বেঁচে থাকতে গিয়ে হাঁসফাঁস করছে । মুক্তির পথ খুঁজতে অবলম্বন বেছে নিচ্ছে ধর্মকে । গুরুশ্রেণী সুযোগ নিচ্ছে মানুষের দুর্বলতার । দেবেশ নিজের মুক্তির কথা ভাবে না কখনো । ভাবার দরকারও পড়েনি কোনদিন । ওর কোন গুরু নেই। মানুষ ধর্মান্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাক এটাই কামনা করে সে ।

দুপুর থেকেই টানা বর্ষণ শুরু হয়েছে । সন্ধ্যা নেমে গেছে অনেকক্ষণ । বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে । উপায়ন্তর নেই দেখে রাস্তায় নামল সে । জলে থই থই করছে পথ । বাস, ট্যাক্সি চলছে ধীর গতিতে । বৃষ্টির মধ্যেই ভিজে ভিজে বাড়িমুখো হচ্ছে অফিস ফেরত মানুষ । দেবেশও ওদের দলে সামিল হল ।
রাস্তার নোংরা জল হাঁটু ছাড়িয়ে উঠছে । ছাতায় আটকানো যাছে না বৃষ্টির ধারাপাত । অবিরাম বর্ষণ চলছেই । ভিজে একসা হল সেও। জুতোর মধ্যে জল ঢুকে যাওয়ায় হাঁটতে খুবই কষ্ট হছে । খালি পায়ে হাঁটতেও ভয় হয় । কোথা থেকে কখন কী ফুটে যাবে পায়ে কে জানে । পথতো আর কুসুমাস্তীর্ণ নয় । কাঁটা আর খানাখন্দে ভরা ।
ঘরে ফিরতে দশটা বেজে গেল । বৃষ্টির মধ্যেই বাজারে ঢুকেছিল আবার । ঈশিতা সকালে বলে দিয়েছিল মাছ, সব্জি আর ফলের কথা। ছেলের পছন্দের সব্জি কিনেছে সে । তপসে মাছও কিনেছে । বাবাই ঘুব পছন্দ করে তপসে ফ্রাই । মোসাম্বি কিনেছে ছেলের জন্যে আর ওদের জন্য আপেল । ছেলে আপেল খায় না । মোসাম্বির রস করে দিলে খায় । গোটা গোটা ফল কামড়ে খেতে কি মজা ওরা জানলই না ।
ভেজা জামাকাপড় ছেড়ে স্নান করতে যাওয়ার আগেই এক ফোঁটা রাস টক্স খেয়ে নিল সে । মনে পড়ল বেশ কয়েক বছর আগের কেরল ভ্রমণের কথা । সেদিন ওদের ফেরার ট্রেন এরণাকুলাম থেকে রাতের বেলা । দুপুর থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছিল । বিকেলের মধ্যে পুরো শহরটা জলের নীচে চলে গেছে । সব রকম যানবাহন বন্ধ । হোটেলের ম্যানেজারের কথায় একটা লোক ঠিক করে ওর মাথায় মালপত্র চাপিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল ওরা, নাহলে হয়ত স্টেশনেই পৌঁছাতে পারত না সেদিন । ওখানে বৃষ্টি নাকি ওরকমই হয় । জমা জলে শহরটাও স্তব্ধ হয়ে যায় । দিদি, ঈশিতা আর ছেলের বুক পর্যন্ত উঠেছিল জল । ওই জল ভেঙেই ওরা স্টেশনে পৌঁছেছিল । দশ মিনিটের পথ পেরোতে সময় লেগেছিল আধ ঘণ্টারও বেশি । স্টেশনে পৌঁছে ঈশিতার বায়না মেটাতে দিদি আর বাবাইকে রেখে আবার ছাতা কিনতে বেরিয়ে কি নাজেহালই না হয়েছিল । আলেপ্পীর বিখ্যাত ছাতা না কিনলে নাকি কেরল ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলেছিল ঈশিতা । তাছাড়া প্রিয়জনের জন্যে কিছু না নিয়ে গেলে চলে ! বানভাসি শহরটা ওদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়নি কপাল ভাল ছিল বলে । দেবেশের সেদিন মনে হচ্ছিল কেন যে ঈশিতাকে আলেপ্পীর ছাতার কথাটা বলতে গিয়েছিল । ট্রেন অনেক লেট করে ছেড়েছিল সেদিন। একফোঁটা করে রাস টক্স সবার মুখে ফেলে দিয়েছিল দেবেশ । ট্রেনে উঠে সবাই শুকনো পোশাক পরে নিয়েছিল । দুদিনের লম্বা ট্রেন জার্নিতে কেউ অসুস্থ হয়নি । মনে হয় রাস টক্স কামালটা করেছিল ।
এক কাপ চা নিয়ে টিভিটা চালিয়ে বসল সে । সব জায়গায় বৃষ্টি আর দার্জিলিং নিয়ে খবর । গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল আশির দশকে । আন্দোলনের ধরন বদলেছে নেতা বদলের সাথে সাথে । সমস্যার সমাধান তো হয়ইনি উলটে সমস্যা গভীর হয়েছে। ওদের একটা নিজস্ব রাজ্য চাই । একটা জাতির নিজস্ব একটা রাজ্য থাকলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় ? দেবেশের মনে হয় গোটা মানবসমাজ অসন্তোষ আর অসহিষ্ণুতা রোগে আক্রান্ত । এ থেকে মানুষের মুক্তি নেই । মানবসভ্যতা ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে । টিভি বন্ধ করে দিল দেবেশ ।
রাতে খাবার পর বুঝল কিছু একটা হতে চলেছে । মাথাটা ভারি হয়ে আসছে আর শরীরটাও ম্যাজম্যাজ করছে । রাস্তায় এখনও লোকজন চলাচল করছে অন্যান্য দিনের মতোই । রাত যত গভীর হবে শহরটার ঘুমও তত গভীর হবে । কিন্তু কখনোই গ্রামের নিস্তব্ধতা এ শহরে আসে না । শহরটার কোন না কোন জায়গায় কেউ না কেউ জেগে থাকে । রক্তচোষারা রাতের অন্ধকারে বেশি সক্রিয় হয় । কানের কাছে ঘুর ঘুর করছে । বসেও পড়ছে এখানে ওখানে । আজকাল মশারাও খুব চালাক হয়ে গেছে । শরীরের এমন জায়গা দেখে বসে যাতে চড়থাপ্পড় না খেতে হয় । চোখের পাতা, কানের লতি বা নাকের মাথায় বসে কুটুস করে কামড় বসিয়ে দেয় ।
শহরটা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, এনকেফেলাইটিসের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে । মাঝে মাঝে সোয়াইন ফ্লু’র জঙ্গীহানাও চলে । গ্রামে গঞ্জেও থাবা বসাচ্ছে এই রোগগুলো । ম্যালেরিয়াতো গ্রামে ঘাঁটি গেড়েছিল অনেককাল আগে থেকেই । বাকিরাও সসৈন্যে আক্রমণ করেছে গ্রামের নিরীহ মানুষগুলোক । মানুষ মরছেও সময় মতো সুচিকিৎসার অভাবে । তা মরুক । হানাহানি,মারামারি করে মরার চাইতে মশার কামড়ে মরা ভাল । তাতে ভ্রাতৃহত্যার দায় থেকে মুক্তি পাবে কিছু মানুষ ।
বৃষ্টি নামল আবার । জলের ছাঁট আসছে জানলা দিয়ে । উত্তপ্ত শরীরে ঠাণ্ডা জলের স্পর্শ কাঁপুনি দিয়ে জানান দিল রক্তমাংসের শরীর ঘুমন্ত শহর নয় । শরীরের শক্তি কে যেন কেড়ে নিয়েছে মনে হচ্ছে । উঠে গিয়ে জানলা বন্ধ করার ক্ষমতাও নেই । ক’দিন আগে উত্তর- দক্ষিণ দুটো ভাগই বানভাসি হয়েছিল । পূজোর আগে আবার নতুন করে বানভাসি হবে নাতো ? এবার মা আসছেন অনেক আগেই । নৌকো করে ঘোর বর্ষা মাথায় নিয়ে । মা চলে যাওয়ার পর বর্ষার বিদায় নেওয়ার কথা ।
কতদিন হয়ে গেল কাশের গুচ্ছে হাওয়া খেলে যাওয়া সেই নদীর কাছে যাওয়া হয়নি । যাওয়া হয়নি শিউলিতলায়ও ।
ছোটবেলার সহপাঠী খুকুর কথা মনে পড়ল । অনেকদিন ওর মুখটা মনে করার চেষ্টা করেও মনে করতে পারেনি । আজও দেখতে পেল না মুখটা । দেবেশ ছাত্রজীবনে অসাধারণ মেধাবী ছিল আর খুকু ছিল ব্যাকবেঞ্চার । দেবেশ যখন কলেজ পাশ করে বেরোয় খুকু তখনও স্কুলের গণ্ডী পেরোয়নি । কিন্তু দেবেশের চোখ ও মন কেড়ে নিয়েছিল হঠাৎই একদিন । লাল পাড় শাড়ী পরে খুকু স্কুলে যাচ্ছিল সেদিন । দেবেশ ফিরছিল ছাত্র পড়িয়ে । চার চোখের মিলন হয়েছিল কিনা সেটা বলতে পারবে না সে । কিন্তু হৃদয়ঘটিত কিছু একটা অনুভব করেছিল । কয়েকদিন ধরে হৃৎপিণ্ডের ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে শুনতে শেষে মমতাকে ধরেছিল । মমতা ওদের পাড়ার ডাকাবুকো মেয়ে । দেবেশকে দাদা বলে ডাকলেও ছিল একেবারে বন্ধুর মতো । মমতা দেবেশের মনের কথা পৌঁছে দিয়েছিল খুকুর কাছে । খুকু প্রত্যাখ্যানও করেনি, আবার গ্রহণও করেনি ওকে । বলেছিল, “দিদির প্রেম নিয়ে বাড়িতে খুব অশান্তি চলছে । আমার পক্ষে এখন কিছুই সম্ভব না । বলিস আমাকে যেন ভুল না বোঝে । ওতো খুব ভালো ছেলে । কত ভালো মেয়ে পাবে ও । পাড়ার কত মেয়েই তো ওর সঙ্গে প্রেম করার জন্যে মুখিয়ে আছে শুনতে পাই ।”
সব শুনে দেবেশ মমতাকে অনুরোধ করেছিল ও যেন পাঁচকান না করে । দেবেশের মনে হয়েছিল সে খুকুকে সামনে পেলে বলত, “প্রেম করা যায় না, প্রেম হয়ে যায় ।” মমতাকে বলেছিল খুকুকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার জন্যে সে খুকুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে। মমতা যেন কথাটা খুকুর কাছে পৌঁছে দেয় । জানে না মমতা কথাটা খুকুকে বলেছিল কিনা । কিন্তু ব্যাপারটার ইতি হয়ে গিয়েছিল সেখানেই ।
খুকুর সঙ্গে সে প্রেম করতে চায়নি কোনদিন । ওকে নিয়ে ভাবেওনি আগে । তবু ওকে কেন যে ভালবেসে ফেলল জানে না সে । খুকুর ওকে ভাল নাই লাগতে পারে । প্রেম কি কখনো বলে হয় ?
দেবেশের মনে পড়ল অনেকবছর আগে খুকুর নতুন নামকরণের ঘটনাটা । খুকুদের চার ভাইবোনকে দিদি পড়াত । স্কুলে খুকুর নামটা বদলানোর খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল । সবাই ঠাট্টা তামাশা করত খুকুর নাম নিয়ে । সত্যিই তো খুকু আবার কারোর নাম হয় নাকি ! খুকু খুব কান্নাকাটি করছিল ক’দিন । খুকুর মা দিদিকে বলেছিল খুকুর জন্যে একটা ভালো নাম বেছে দিতে । দিদি সেটা আবার বাড়িতে আলোচনা করছিল একদিন । খুকুকে নিয়ে ওর সেদিনও কোন আগ্রহ ছিল না । খুকু পাড়ার মেয়ে আর ওর সঙ্গে একসময় পড়ত এটা ছাড়া অন্য কোন পরিচয় ছিল না ওর । তবু দিদির ছাত্রী বলে ওর নামটা নিয়ে একটু ভেবেছিল । ভাবতে গিয়েই নামটা মাথায় এসেছিল । বলেছিল ওর নাম ঈপ্সিতা রাখতে । দিদির পছন্দ হয়েছিল নামটা । খুকুদের বাড়িতেও নামটা পছন্দ হয়েছিল খুব । সেই থেকে খাতায় কলমে খুকু হয়ে গেল ঈপ্সিতা ।
দেবেশ তখন ভাবেনি ওর কাছেও কোনদিন ঈপ্সিতা হয়ে দেখা দেবে খুকু নামের ব্যাকবেঞ্চার মেয়েটা । যখন সে প্রেমে পড়ল তখনও প্রথমে ভাবতেই পারছিল না কী করে সেটা সম্ভব হল । ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল খুকুকে । ভুলেও গিয়েছিল এতগুলো বছর । অবশ্যই চাকরি এবং নতুন জায়গা খুকুকে ভুলতে সাহায্য করেছিল । সময় ক্ষতে প্রলেপ দেয় । ক্ষত নিরাময় হলেও মনের কোথায় যেন একটু দাগ রয়ে যায় । যেমন আজ দাগটার কথা বৃষ্টির শব্দের মধ্যে ঢুকে পড়ল মাথায় । খুকুর মুখটা যতবার মনে করার চেষ্টা করছে ততবারই ঝাপ্সা হয়ে যাচ্ছে ওর চোখদুটো । খুকু ঈপ্সিতা না হলেই ভালো হত সেদিন ।

ঈশিতার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল একটা শব্দ শুনে । সদ্য ঘুমভাঙা চেতনায় প্রথমে বুঝতে পারল না কিসের শব্দ শুনে ঘুমটা ভেঙেছে । একটু ধাতস্থ হলে সে একটা গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেল । গোঙানির শব্দটা খুব কাছে থেকেই আসছে বুঝতে পেরে হাত বাড়াল উৎসের দিকে । ছ্যাঁত করে উঠল হাতটা । কী গরম শরীরটা ! হাত বাড়িয়ে বেডসূইচটা খুঁজে নিয়ে আলোটা জ্বালাতে গেল । জ্বলল না । অগত্যা উঠতেই হল ।
– কে খুকু ? এতদিন পরে এলি ! আয় না কাছে একটু দেখি তোকে ।
– কে খুকু ! কাকে ডাকছ তুমি ? কাছে গিয়ে ঝুঁকে পড়ে ঈশিতা । খুকুকে সে চেনে না । দেবেশের মুখে এর আগে কোনদিন খুকু নামটা শোনেনি । বাণী, স্বপ্না, শুক্লা, কলি, শিখা এসব নামগুলো অনেকবার শুনেছে । এরা কেউই ওর প্রেমিকা নয় । কেউ পাড়ার মেয়ে, কেউ বা বন্ধু । অবশ্য এর মধ্যে কেউ কেউ ওর প্রেমিকা হতেই পারত দেবেশের কাছেই শুনেছিল । “আমার জীবনে মেয়ে কম আসেনি কিন্তু প্রেম করতে পারলাম না কারোর সাথেই ।” অনেকবার আপশোষ করেছে সে । ঈশিতা বলেছে, “আমার সঙ্গে বিয়ে হবে বলেই কারো সাথে প্রেম হয়নি তোমার ।”
দেবেশ চোখ মেলল । জবাফুলের মতো টকটকে লাল চোখ । ঈশিতা ভয় পেয়ে গেল খুব । ছেলেকে ডেকে তুলল , “তোর বাবার খুব জ্বর এসেছে । ভুল বকছে । একজন ডাক্তার ডাকবি নাকি হাসপাতালে নিবি দ্যাখ না ।”
-এত রাত্রে কোন ডাক্তার আসবে ! দেখছো না বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে খুব । দেখ না একটা প্যারাসিটামল পাও কিনা । আজকের রাতটা কাটুক, কাল সকালে দেখা যাবে । ঘুমজড়ানো চোখে কথাগুলো বলে সে তার কর্তব্য শেষ করল ।
ঈশিতার খোঁজ শুরু হল । খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে যখন সে হাল ছেড়ে দেবে ভাবছে তখন মনে পড়ল কালো রঙের ছোট ব্যাগটার কথা । ব্যাগটা শোকেসের মধ্যে থাকে । ওতে টুকিটাকি ওষুধ, থার্মোমিটার এসব রাখে দেবেশ । হ্যাঁ, পেয়েছে সে । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এক গ্লাস জল ভরে নিয়ে এল ঈশিতা । ওষুধ আর জলের গ্লাস মুখের সামনে ধরে ডাকল দেবেশকে । “এই শুনছো, এই ওষুধটা খেয়ে নাও না ।”
রক্তচক্ষু মেলে উঠে বসল দেবেশ । ট্যাবলেটটা মুখে দিয়ে জল খেল একটু । তারপর শুয়ে পড়ল আবার ।
জানলাগুলো বন্ধ করে লাইট নিভিয়ে দেবেশের পাশে শুয়ে পড়ল ঈশিতা । খুব ঘুম পাচ্ছে ওর । ভাবল, দেবেশের জ্বরটা নিশ্চয়ই এবার কমে যাবে । জ্বরটা না কমলে কাল সকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে না হয় ।
………………………
@ তপন বিশ্বাস

Let us enjoy every day as a new year. This site calls for everyone to be in the realm of creation which can be anything- writing, gardening, drawing, origami even some items created for home decoration that gives you satisfaction and makes the day a new year. That gives meaning to life. Let us share our creations on this page.

View Comments

There are currently no comments.
Next Post