“-অরণ্য তাপস-” শ্যামল মিত্র
নগরের শ্বাসরোধ করা ভীড় থেকে মুক্ত অনেক দূরের
একটা জায়গার কথা ভাবি- যেটা আমি কখনো
চোখে দেখিনি কিন্তু জানি কোথাও না কোথাও
সেই জায়গাটা আছে যেখানে কোলাহল নেই,
হারিয়ে যাবার ভয় নেই,
বোবা হয়ে বসে থাকার ভয়ও নেই:
গলা ছেড়ে গান গাইলে দূরে সার বেঁধে
দাড়িয়ে থাকা পর্বত শ্রেণী সে সুরের
প্রতিধ্বনি আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়:
অরণ্যের নিস্তব্ধ শব্দগুলো নীরব সুরে সমৃদ্ধ হয়ে
সবুজ স্নিগ্ধ গভীরে অরণ্যের গান হয়ে ছড়িয়ে পড়ে;
সেই সুর সুউচ্চ পর্বতচূড়োয় জমে থাকা নিষ্প্রাণ তুষাররাশিকে
উষ্ণ ভালবাসা হয়ে গলিয়ে দেয়;
হিমানী-স্নিগ্ধ সুর পৃথিবীর কাব্য হয়ে
মাটির বুকে সুরের ঝর্ণা আর মাটির আশা হয়ে নেমে আসে:
কল্পনা ছাড়িয়ে আমার ‘নেই কোলাহল’এর সেই কল্পজগতে
মুগ্ধ বিচরণের সময় দেখা হয়েছিল এক তদ্গত অরণ্যতাপসের সাথে;
অপার বিস্ময়ে সে তাকিয়েছিল গাছগাছালির মাঝে
নির্ভয় নিষ্পাপ দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে থাকা হরিণশিশুর দিকে:
আমি সবিনয়ে তাঁর পরিচয় জানতে চেয়েছিলাম;
তিনি ঈঙ্গিতে নীরব থাকতে বললেন আমাকে,
শুধু অস্ফুটে বললেন – ‘মন ভরে আশ মিটিয়ে
প্রকৃতির নীরব রূপকথা শোনো,
দু’চোখ ভরে দেখ তার অনির্বচনীয় ছবিরূপ;
মনে হচ্ছেনা, যেন ‘হকুসাই’ অঙ্কিত অপূর্ব চিত্রপট?
লবটুলিয়ার ভূমিপুত্র যারা তাদের কথা মনে আছে তোমার?
রাজু পাঁড়ের কথা, যে চালের অভাবে চিনে ঘাসের দানা
ফুটিয়ে খায় তবুও সেখানকার দূখীদের আপ্রাণ সেবা করে?
তুমি জঙ্গলের গভীরে কাক জ্যোৎস্নায় মহিষ দেবতা
“টাঁড়বারো”কে দেখনি, যার আকাশছোঁয়া বিশাল কালো শরীর?
আমি তাদের সবাইকে দেখি! আমি অরণ্যের রূপ দেখি’।
বিস্ময়ে অভিভূত আমি আবার প্রশ্ন করি – ‘কে আপনি?’
মৃদুসুন্দর হাসি মুখে তিনি বলেন – ‘আমি আরণ্যক,
কর্মসূত্রে অনেকদিন লবটুলিয়ার জঙ্গলে ছিলাম!’
View Comments
The Guitar
নগরের শ্বাসরোধ করা ভীড় থেকে মুক্ত অনেক দূরের একটা জায়গার কথা ভাবি- যেটা আমি কখনো চোখে...